Home ভ্রমন ঘুরে আসুন পাহাড়ের শহর দার্জিলিং থেকে

ঘুরে আসুন পাহাড়ের শহর দার্জিলিং থেকে

চোখটা বন্ধ করুন।এবার ভাবুন, আপনি ছুটছেন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে। আর মেঘ পাল্লা দিয়ে চলছে আপনার সাথে। আর আপনি ছুটছেন প্রায় সাত হাজার ফুট উচ্চতার এক শহরের উদ্দেশে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন ।বলছি দার্জিলিংয়ের কথা। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ছবির মতো সুন্দর শহর এই দার্জিলিং।

কিভাবে যাবেন?
স্থলপথে রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি দার্জিলিং যেতে চাইলে উত্তরবঙ্গের বুড়িমারি সীমান্ত অতিক্রম করে যাওয়াটাই সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকার গাবতলী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে উত্তরবঙ্গের বুড়িমারী সীমান্তের উদ্দেশে। মতিঝিল থেকেও ভারতের শিলিগুঁড়ি পর্যন্ত যায় শ্যামলী পরিবহণের গাড়ি। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকে পাসপোর্টে নির্দিষ্ট সময়ের ভিসা নিয়ে রাত ১০টার সুপার সেলুন চেয়ার কোচে উঠে পড়তে পারেন বুড়িমারী সীমান্তের উদ্দেশে। ভোর ৭টা নাগাদ আপনি অনায়াসে পৌঁছে যাবেন বুড়িমারী চেকপোস্টে। ইমিগ্রেশন অফিসের কাছেই থামবে  বাস । প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির সাথেভ্রমণ কর ও কাস্টমসের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিন । অবশ্য আপনি যদি চান তবে ঢাকা থেকেই ভ্রমণ কর প্রদান করে যেতে পারেন সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায়। বুড়িমারী অতিক্রম করে ওপারে চ্যাংড়াবান্দা সীমান্তে পৌঁছে একইভাবে সম্পন্ন করে নিন আপনার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের সব প্রক্রিয়া। এরপর আপনার বহনকৃত ইউএস ডলার চ্যাংড়াবান্দায় অবস্থিত সরকার অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে ভারতীয় মুদ্রায় পরিবর্তন করে নিন। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে টাকা ভাঙাতে আপনাকে পড়তে হবে বেশ বিপাকে।

darjeeling-india--dearbanglচ্যাংড়াবান্দা থেকে সরাসরি ময়নাগুড়র বাস ধরে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন শিলিগুড়ি জিপ স্টেশনে। ভাড়া জনপ্রতি ভারতীয় ৭০ রুপি। আর সেখান থেকেই ঝটপট ১২০ ভারতীয় রুপির বিনিময়ে সংগ্রহ করে নিন দার্জিলিংগামী কমান্ডার জিপের টিকিট।আর হাতে শীতের পোশাক নিয়ে বসে পড়ুন আপনার নির্ধারিত আসনে। ব্যস, মাত্র আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন মেঘের দেশ দার্জিলিংয়ে।

কোথায় থাকবেন?
দার্জিলিং শহরে রয়েছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেলে প্রতিদিনের থাকা এবং খাওয়াসহ জনপ্রতি ভাড়া পড়বে প্রায় ৮৫০-১২০০ রুপি । প্রায় প্রতিটি হোটেলেই রয়েছে দর্শনীয় স্থানসমূহ, ঘুরে বেড়ানোর জন্য আকর্ষণীয় জিপ, সার্বক্ষণিক গরম পানির ব্যবস্থা, ঠাণ্ডা প্রতিরোধের ওষুধসহ যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক সেবা।

খাবার-দাবার:
ট্যুরিস্টদের জন্য হোটেলগুলোতে রয়েছে সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা। ফলে পুষ্টিকর ও রুচিসম্মত খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তার নেই কোন কারণ। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য ট্যুরিস্টের আগমনের ফলে একেবারে বাঙালি রুচিসম্মত খাবার-দাবারের জোগান দিয়ে থাকেন এখানকার হোটেল মালিকরা। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার ছাড়াও ভোরবেলায় বেড-টি এবং ডিনারের আগে ইভনিং-টি’র ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

দর্শনীয় স্থান :
দার্জিলিং জুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে বেড়ানোর জন্য প্রায় ১৭টি আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে এখানে।সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায় এখানে। পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা-স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি, ছবির মতো অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ।বিলুপ্ত-প্রায় পাহাড়ি বাঘ স্নো লুপার্ড খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা,পাহাড়ে অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট’,এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং-রক- এর স্মৃতিস্তম্ভ, কেবল কারে করে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ।

darjeeling-singtom-tea-planহ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেনে বসে তাৎণিকভাবে পৃথিবীখ্যাত ব্ল্যাক টি পানের অপূর্ব অভিজ্ঞতা।যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেলপ্ সেন্টার। সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত মনোরম খেলাধুলার স্থান দার্জিলিং গোরখা স্টেডিয়াম।

নেপালি জাতির স্বাক্ষর বহনকারী দার্জিলিং মিউজিয়াম। পৃথিবীর বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টেম্পল ব্রিটিশ আমলের সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কাউন্সিল হাউস ‘লাল কুঠির’ অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খ্যাত ‘আভা আর্ট গ্যালারি’। শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির ‘দিরদাহাম টেম্পল’।

এসব নিদর্শন তো রয়েছেই সাথে আপনার মনের চিরহরিৎ জগতকে এক নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করাতে চলে যেতে পারেন পাথর কেটে তৈরি ‘রক গার্ডেন’ এবং গঙ্গামায়া পার্কে উপরোল্লিখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে । এছাড়াও আপনার হৃদয় গহিন থেকে রোমাঞ্চিত করবে মহান সৃষ্টিকর্তার বিশাল উপহার হিমালয় কন্যা ‘কাঞ্চন-জংঘা’, বিশুদ্ধ পানির অবিরাম ঝর্ণাধারা ‘ভিক্টোরিয়া ফলস্’ এবং মেঘের দেশে বসবাসরত এক সুসভ্য জাতির সংস্কৃতি।

কেনাকাটা:
দার্জিলিং শহরের লাডেন-লা রোডের কোল ঘেঁষেই রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় মার্কেট। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য প্রায় সব জিনিসই আপনি পেয়ে যাবেন এখানে এবং তা আপনার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই। সবচেয়ে ভালো যা পাবেন তা হল শীতের পোশাক। আপনার পছন্দমতো মূল্যে হাতমোজা, কানটুপি, মাফলার, সোয়েটারসহ যে কোনো প্রকারের লেদার জ্যাকেট পেয়ে যাবেন এখানে। এছাড়াও  ১০০ থেকে ৫০০ রুপির মধ্যেই পেয়ে যাবেন অসাধারণ কাজ করা নেপালি শাল এবং শাড়ি যা কি না  আপনার পছন্দ হতে বাধ্য। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ২০ রুপি থেকে ২৫০ রুপির মধ্যে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন অ্যান্টিক্স ও নানাবিধ গিফট আইটেম। তাছাড়া আকর্ষণীয় লেদার সু আর বাহারি সানগ্লাস তো আছেই।

মোট খরচ:
অল্প আরামে মনটাকে মানিয়ে নিতে পারলে স্বল্প খরচে ঘুরে আস্তে পারেন দারজিলিং।শীত মৌসুমে মাত্র ১৬,০০০ টাকার মধ্যেই আপনি সেরে নিতে পারেন স্বপ্নপুরী দার্জিলিং দেখার যাবতীয় কার্যক্রম। তবে এ হিসাবটা শুধু বুড়িমারী সীমান্ত পথের। কলকাতার শিয়ালদহ হয়ে গেলে এ হিসাব বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২০,০০০ টাকায়। এছাড়াও দেশে রয়েছে অসংখ্য ট্যুরিজম কোম্পানি, যারা দার্জিলিংসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করে থাকে।তাদের সাথে যোগাযোগ করেও যেতে পারেন।