Home ইসলাম ও জীবন লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব

লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব

লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব

দেখতে দেখতে মাহে রামাযান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকে। সৌভাগ্যবান লোকেরা এ মাসে আঁচল ভরে পাথেয় সংগ্রহ করছে আর হতভাগারা এখনো অন্ধকারের অলি-গলিতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে।

‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত। (আল কোরআন, সুরা-৯৭ [২৫] আল কদর (মাক্কি), রুকু: ১/২২, আয়াত: ১-৫, মঞ্জিল: ৭, পারা: ৩০ আম্ম-সি পারা, পৃষ্ঠা ৬০৫/১৯)।

রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। শবে কদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।’ (আল কোরআন, সুরা-২ আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৩/৭, আয়াত: ১৮৫, মঞ্জিল: ১, পারা: ২ সাইয়াকুল, পৃষ্ঠা ২৯/৭)।

কোরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আসমানি এক শ সহিফা, চারখানা কিতাবসহ মোট এক শ চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআনই সেরা। কারণ, এই কিতাব নাজিল হয়েছে আখেরি নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, নবীগণের ইমাম, রাসুলদের সরদার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা (সা.)-এর প্রতি। এই কোরআনের স্পর্শ বড়ই সৌভাগ্যের। হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এই কোরআন বহন করেই ফেরেশতাদের সরদার হওয়ার গৌরব লাভ করেছেন। মরুর দেশ ‘জজিরাতুল আরব’ এই কোরআনের স্পর্শেই পবিত্র আরব ভূমির সম্মান লাভ করেছে। অলক্ষুনে ও দুর্ভোগময় খ্যাত ‘ইয়াসরিব’ এই কোরআনের বরকতেই পুণ্য ভূমি ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র সম্মানে ধন্য হয়েছে। তাগুতের আখড়া পাপের আকর শিরক ও কুফরের শীর্ষ তীর্থস্থান ‘বাক্কা’ এই কোরআনের তাজাল্লিতে পবিত্র মক্কা নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই কোরআনের পরশে স্বল্পমূল্য কাপড়ের ‘গিলাফ’ বুকে জড়ানোর সম্মান পাচ্ছে। এই কোরআনের ছোঁয়ায় সাধারণ কাঠের ‘রেহাল’ সম্মানের চুমু পাচ্ছে।

সূরা আল কদর

বাংলা উচ্চারণঃ
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর, তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহ, ফিহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন, সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর।

বাংলা অর্থঃ
নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।