Home ভ্রমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর

রাজধানী শহর ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বাড়িটিই রুপান্তর করা হয়েছে স্মৃতি জাদুঘরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ বাড়িটিতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের অন্য সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। এখানে তাঁর সারা জীবনের বিভিন্ন দুর্লভ ছবি এবং শেষ সময়ের অনেক স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে।

বাড়িটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত নানা জিনিসপত্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বীভৎস ঘটনার সাক্ষী বহন করছে দেয়াল এবং সিঁড়িতে গুলির চিহ্ন। তিনতলা ভবনটিকে বলা হয় বঙ্গবন্ধু ভবন। ১৯৯৭ সালে এই বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।

পটভূমি

১৯৬১ সালের ১ লা অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের এই  বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচন, ১৯৭১ এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, এই সবগুলো ক্ষেত্রেই শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা প্রনয়ন, দলের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা শোনা এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি। দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা এই বাড়িতে ভিড় করেছেন ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে।

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” – ৭ই মার্চের বিখ্যাত সেই ভাষণের রুপরেখাটি বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এখানকার কনফারেন্স টেবিলে বসে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি তখনও তিনি এই বাড়িটি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকেন। এই বাড়ি থেকে অসংখ্যবার পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। সর্বশেষে গ্রেপ্তার করেছিল ৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাতে। বলা হয়ে থাকে তিনি ধরা দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন তাঁকে না পেলে এই সৈন্যরা নিরস্ত্র জনগণের উপর নারকীয় তাণ্ডব চালাবে। পরবর্তীতে এই বাড়িতেই তাঁকে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট।

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Memorial Museum

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে এবং নাম দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। কয়েক ধাপে জাদুঘরটির উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম এবং বর্তমান পর্যায়ে একতলায় দুটি এবং দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ জাদুঘরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কক্ষযুক্ত হবে। মূল ভবনের পেছনে চার তলা একটি ভবন নির্মানের কথা রয়েছে জাদুঘরের জন্য। নতুন ভবনে একটি লাইব্রেরী ও অডিটোরিয়াম রয়েছে। তবে এখনো চালু করা হয়নি।

দর্শনীয় বিষয়

জাদুঘর ভবনটিতে ঢুকে এক তলাতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। একতলায় জাদুঘরটির প্রথম কক্ষে ছবির মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে বলা যায়। সেই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলাপচারিতা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এই কক্ষটি ছিল মূলত ড্রইং রুম। যেখানে বসে বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করেছেন। এই কক্ষের পাশের কক্ষটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর। এখানে বসে তিনি লেখালেখিও করতেন। এখান থেকেই তিনি ৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় এখনো চোখে পড়বে সেই রাতের তান্ডবলীলার নিদর্শন। এছাড়া এখানে শিল্পীর তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি প্রতিকৃতি রয়েছে।

দোতলায় গিয়ে প্রথমেই যে কক্ষটি পাওয়া যায় সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর বাসকক্ষ। এর পরের প্রথমে কক্ষটি ছিল তাঁর শোবার ঘর, তারপরের কক্ষটি কক্ষটি শেখ রেহানার শোবার ঘর। এ কক্ষগুলোয় এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের নানা স্মৃতি চিহ্ন। এটি কেবল একটি পারিবারের স্মৃতি চিহ্ন নয়। এগুলো একটি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এখানে থাকা বিভিন্ন প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের খেলার জিনিস। যেমন- বল, হকষ্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবি ইত্যাদি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তো রয়েছেই। আরও নিদর্শন প্রদর্শনীর জন্য আনার কথা রয়েছে।

সময়সূচী

সপ্তাহে বৃহষ্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। বুধবার এটি বন্ধ থাকে। এছাড়াও সরকারি সকল ছুটির দিনগুলিতেও বন্ধ থাকে এই জাদুঘর।

টিকেট

জাদুঘরটিতে একটি মাত্র টিকেট কাউন্টার রয়েছে। ভিড় থাকলে লাইন ধরে টিকেট কাটতে হয়। টিকেটের মূল্য ৫ টাকা। ৩ বছরের কম বয়সীদের কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না। আর শুধুমাত্র শুক্রবার ১২ বছরের কম বয়সীরা টিকেট ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পায়।

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য

# জাদুঘরের ভেতরে খাবার, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ। এসব কাউন্টারে জমা দিয়ে একটি টোকেন নিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

# বর্তমানে জাদুঘরটি সরকারী নিয়ন্ত্রনাধীন।

# জাদুঘরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে।

# নিরাপত্তার জন্য সর্বদা পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী নিয়োজিত আছে।

# গাড়ি পার্কিং সুবিধা নেই।

# গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে।

# জাদুঘরটিতে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম দুটি আলাদা পথ রয়েছে।

# জাদুঘরটিতে প্রবেশের সময় হাতের ডান পাশে টয়লেট পাওয়া যায়। এখানে পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য এব্যবস্থা রয়েছে।

# জাদুঘরে থাকা বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়।

# তিন তলা ভবনটির একতলায় অফিস কক্ষ এবং একটি ক্ষুদ্র বিক্রয় কেন্দ্র আছে। এই বিক্রয় কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিন বিক্রি হয়।