Home ইসলাম ও জীবন ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়

ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অশেষ নিয়ামত ও পুরস্কার।

আর এই ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সবাই যখন ব্যস্ত তখন আমাদের হয়তো অনেকেরেই জানাই থাকেনা আমাদের পাশের মানুষের ঈদ কেমন যাচ্ছে এবং কি নিয়ে তারা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধু একটি উৎসব নয় বরং এটি মহান ইবাদত যেখানে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়, এদিন সাদা-কালো, ধনী-গরীব, ছোট-বড় সকল ভেদাভেদ ভুলে সর্বশ্রেণী মিলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি।

পাশাপাশি কল্যাণময়, বরকতময়, খুশী এবং আনন্দের এই দিনে তাদের স্মরণ করা উচিৎ যাদের কারনে আপনি এই পৃথিবীর মুখ দেখতে পেয়েছেন, যাদের কারনে এই পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন। সবচেয়ে বেশী মনে করা উচিত মৃত্যু যাদেরকে এই দুনিয়া থেকে অন্য দুনিয়াতে নিয়ে গিয়েছে যেখান থেকে ফেরার আর কোন উপায় নাই। এই বরকতময় তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা এবং সেই পথে আমাদেরও একদিন যেতে হবে তা চিন্তা করে শুকরিয়া আদায় করা, নিজ পরিবার থেকে শুরু করে সারা জাহানের মুসলিম উম্মাহার জন্য দোয়া করা।

এই ঈদ উৎসব পালনকালে তাদের কথা মনে রাখতে হবে যারা কঠিন পীড়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল বা বাড়ীতে পরে আছে। মানসিক যন্ত্রণা, ব্যথার কারনে যাদের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছে। আমাদের দোয়া করা উচিত তাদের জন্য যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরতে পারে সম্ভব হলে তাদের সেবা করা এবং নিজের জন্য শুকরিয়া আদায় করা সুস্থ ও নিরাপদে থাকার জন্য। আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি যে সুস্থ আছেন তাঁর শুকরিয়া আদায় করা।

আজ মুসলিম উম্মাহর সেই ভাই-বোন দের কথা ভুলে গেলে চলবেনা যারা বিপর্যস্ত অবস্থার ভিতরে দিন কাটাচ্ছেন। যুদ্ধ যাদেরকে করেছেন ঘরহীন করেছে সর্বস্বান্ত। কাওকে করেছে এতিম, কেও হয়েছেন স্বামীহারা কেওবা স্ত্রীহারা, কেও হয়েছেন পিতৃহীন কেওবা মাতৃহীন। সেই বিপদ্গ্রস্থ মানুষের জন্য দুই হাত তুলে দোয়া করা যেন তারা সেই অবস্থা দ্রুত কেটে উঠতে পারেন এবং সম্ভবপর হলে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া কারন সাহায্যের মাধ্যমে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি এবং আল্লাহ যেন তাদের বিপদ থেকে দ্রুত উদ্ধার করেন সেই দোয়া করতে পারি।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

“নিজেদের কল্যাণের জন্য তোমরা যেকোন উত্তম কাজ করে থাকো, তার পুরস্কার আল্লাহর নিজের কাছ থেকে পাবে” [সূরা আল-বাকারাহ: ১১০]

ঈদের দিন সূর্যাস্তের পর ঈদ-উল-ফিতর এর সালাত জামাতের সাথে আদায় করা। সালাত আদায়ের আগ পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকা। এ হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে আল্লাহ মহান এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। পুরুষেরা জোরে পরবে কিন্তু মহিলারা আস্তে পরবে।

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”

যাকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে ভুল-বিভ্রান্তি ও পাপ হয়েছে তা মোচন করার জন্য এবং গরীব মিসকিনদের খাদ্য যোগানের উদ্দেশ্যে ফিতরা প্রধান করা হয়। যা চাইলে আপনি ঈদের ২-৩ দিন আগে পরিশোধ করতে পারবেন কিন্তু ঈদের সালাতের পর হওয়া যাবেনা, অবশ্যই ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে হবে।

ঈদের দিন সকালে গোসল করা, সুন্দর পোষাক পরিধান করা ও পুরুষদের খোশবু ব্যবহার করা উত্তম। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সুন্নত অনুসারে ৩/৫ টি খেজুর খাওয়া। রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে বাসায় ফেরা। ঈদের জামাতে শামিল হওয়া এবং সম্পূর্ণ খুতবা শোনা। ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব যা কোন কারন ছাড়া ত্যাগ করা যাবেনা।

নামাজ আদায় করার পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা বরং এতে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। অভিভাদন জানাতে গিয়ে, ‘‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’’

অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন’বলা ভাল। ঈদ উৎসব উপলক্ষ করে যাতে কেও পাপাচার এবং অশ্লীলতায় নিমজ্জিত না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে যা থেকে নিজে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে।

সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজানের মাস ছিল মুলত তাকওয়া অর্জনের মাস, ইমান মজবুত করার মাস, কুরআনমুখী হয়ে কুরআনের মর্ম উপলব্ধি করার মাস এবং সর্বশেষে সবচেয়ে লাভের মাস যেমাসে ইবাদাত করলে কয়েক হাজার গুন বৃদ্ধি পাবে, দান করলে কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে, গরীবদের ইফাতার করালে ইফতার করালে সম্পদ বাড়ে। সেই মাস আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে তাঁর জন্য আমাদের আফসোস করা। রমজানের মাস আরেকজনের দুঃখ কষ্ট বুঝে বাকি এগারো মাস ইবাদত করা।

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

“মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক”। [সূরা আল-হিজর:৯৯]

পবিত্র রমাজান মাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি সময় যাতে চলতে পারা যায় তাহলে আমাদের আমাদের এ উৎসব সার্থক হবে। এই একমাস নিজেদের যেভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে বাকি সময় যাতে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য থেকে দূরে না সরে যাই। আল্লাহ যেন রমজানের শিক্ষা নিয়ে সবাই কাজে লাগাতে পারে সেই তৌফিক দান করুক। আমীন