Home ইসলাম ও জীবন মিথ্যা বলা সকল পাপের মূল; মিথ্যার পরিণাম

মিথ্যা বলা সকল পাপের মূল; মিথ্যার পরিণাম

ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘সত্যবাদিতা’। এই বৈশিষ্ট্য ছাড়া একজন মুমিন পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারে না। একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না।

মিথ্যা যে কত মারাত্মক এটা আমরা তেমন একটা খেয়াল করিনা। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলে ফেলি। মুনাফিক অর্থ হলো কথায় এবং কাজে দ্বিমুখী আচরণ করা। মুখে এক রকম এবং কাজে আরেক রকম ভাব পোষণ করা। মুনাফিকরা মানুষের সামনে এক ধরনের এবং পেছনে আরেক ধরনের আচরণ করে থাকে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, “চারটি স্বভাব কারো মধ্যে থাকলে সে পুরোদস্তুর মুনাফিক, আর যার মধ্যে তার কোনো একটি থাকবে, সে যতক্ষণ না তা পরিত্যাগ করবে ততণ পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাবই থাকবে।”

  • যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় এবং সে তাতে খিয়ানত করে
  • যখন কথা বলে মিথ্যা বলে
  • যখন কোনো ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং
  • যখন কারো সাথে ঝগড়া করে গালাগালি করে (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা পরিহার করা ও সত্য বলার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক করেছেন। একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। সত্য বলা ফরজ আর মিথ্যা বলা হারাম। সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে।’

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ইমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগী হও।’ (সুরা তাওবা, আয়াতঃ ১১৯)

যে কোনো মুমিন ব্যক্তি উপলব্ধি করেন যে, সত্য বলা মানুষের একটি উৎকৃষ্ট গুণ আর মিথ্যা বলা একটি নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। একজন ভালো মানুষ সবসময় সত্য বলেন। তো সত্য বলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন ফরয তেমনি বুদ্ধির দিক থেকেও এক উত্তম ও অপরিহার্য মানবীয় বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য সত্যবাদিতার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম যেহেতু ‘দ্বীনে ফিতরত’ তাই এখানে সত্যবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম।

সব চেয়ে ঘৃণিত হচ্ছে হাসি-মসকরাচ্ছলে মিথ্যা বলা। অনেকে ধারণা করে যে হাসি-রসিকতায় মিথ্যা বলা বৈধ। এটা ভুল ধারণা, এর কোন ভিত্তি নেই ইসলাম ধর্মে। রসিকতা কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায়, মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। মুয়াবিয়া বিন হাইদা বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছিঃ “ধ্বংস তার জন্য যে, লোক হাসানোর জন্য কথা বলে এবং তাতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। ধ্বংস তার জন্য, ধ্বংস তার জন্য।” (তিরমিজী, আবুদাউদ)

মিথ্যা বলার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ আর নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: মিথ্যাবাদীকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। কুরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। মিথ্যাবাদীর পাল্লায় পড়ে মানুষ প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।” (সূরা নাহাল-১০৫)

 

মিথ্যা বলা বর্জনের উপায়

মিথ্যা আমাদের বর্জন করতেই হবে। কীভাবে বর্জন করব- এ দিকেও হাদীসে ইঙ্গিত আছে। আর তা হচ্ছে, সত্য বলার চেষ্টা করা এবং এ সংকল্প করা যে, আমি মিথ্যা বলব না, কোনো অবস্থাতেই না। আমি চেষ্টা করব সত্য বলার, সঠিক বলার। দেখুন, আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে বলেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا

‘ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর আর সঠিক কথা বল।’ (সূরা আহযাব, আয়াত ৭০)

তাহলে আমাকে সাবধান হতে হবে, আমি যে কথাটি বলছি, তা সঠিক কি না, ন্যায়সংগত কি না। সঠিক হলে বলব, না হয় বলব না। একজন মুমিন যদি এই চেষ্টায় থাকেন সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকেন আর আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকেন তাহলে আল্লাহ পাক তাকে সত্যবাদিতার গুণ দান করবেন। আর যিনি তা লাভ করবেন তিনি তো এক মহা সম্পদ লাভ করবেন।

 

মিথ্যার পরিণাম

মিথ্যা বলার পরিণাম খুবই ধ্বংসাত্মক। এর জন্য দুনিয়াতে রয়েছে ধ্বংস আর আখেরাতে রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা। মুনাফিকের শাস্তি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে – তথা সর্বাপেক্ষা কঠিন। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরা হল

  • মিথ্যার কারণে অন্তরে কপটতার সৃষ্টি হয়।
  • মিথ্যা পাপাচার ও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
  • মিথ্যুকদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না।
  • মিথ্যার কারণে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাগতেই চেহারা বিবর্ণ ও মলিন হয়ে যায়।
  • হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মিথ্যুকের চোয়াল চিরে গর্দান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। (বুখারী)