কিংবদন্তি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ঢাকার অদূরে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লী, তা নিয়ে হুমায়ুন ভক্ত ও ভ্রমন পিপাসুদের আগ্রহের শেষ নেই। পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র ও শুটিংস্পট হিসেবে এটি বেশ পরিচিত। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত নুহাশ পল্লী।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলই নুহাশ পল্লীতে চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো।
গাজীপুর (Gazipur) চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লী যা ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি। একেবারে জঙ্গলের ভিতরে হঠাৎ করে এক টুকরো পরিচ্ছন্ন উদ্যান। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। এখানে প্রায় ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, ফলজ, বনজ ও মসলা জাতীয় গাছ রয়েছে। চেনার সুবিধার্থে প্রতিটি গাছের গায়ে লাগানো আছে পরিচিতি নামফলক। উপরে লিচু, জাম আর শান্তির প্রতীক জলপাই গাছ। নিচে সবুজ ঘাসের গালিচা। যেন এক টুকরো শান্তি নিকেতন। এইখানে চির নিদ্রায় হুমায়ূন আহমেদ, উত্তরাধুনিক বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক।
নুহাস পল্লীতে ঢুকে হাতের বাঁ-পাশে চোখে পড়বে একটি নামাজের ঘর। যেটাকে শেফালি গাছ ছায়া দিয়ে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। আসলে নুহাশ পল্লীর প্রত্যেকটি স্থাপনা প্রকৃতির চাদরে মোরা। যা দেখলে যে কারো চোখ ও মন দুই জুড়িয়ে যাবে।
কি কি আছে নুহাশ পল্লীতেঃ
এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানকাধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নরিকেল গাছ।
এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে।
কিভাবে যাবেনঃ
আকর্ষণীয় নুহাশ পল্লী দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ভাবে যেতে পারেন। তবে রাজধানী ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন তা বলে দিচ্ছি; গুলিস্তান থেকে ছেঁড়ে আসা প্রভাতী-বনশ্রী বাসে যোগে প্রথমে যেতে হবে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাজারে। সেখান থেকে ছোট ছোট অটো বা টেম্পো যোগে নুহাশ পল্লীতে যাওয়া যায়। এছাড়া নিজস্ব গাড়িতে করেও নুহাশ পল্লীতে যাওয়া যায় অনায়াসে।
সাধারণত এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নুহাশ পল্লী দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয় এ পল্লী। পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৫০ হাজার টাকা। তবে সরকারি ছুটির দিনে ৬০ হাজার টাকা গুনতে হয়। ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ
সাইফুল ইসলাম বুলবুল, ব্যবস্থাপক, নুহাশ পল্লী।
মোবাইলঃ ০১৭১২০৬০৯৭১, ০১৭৩৮৭০৪০১০
ঢাকা অফিসঃ পাপন খাঁন- ০১৭২২৪৩৭৮৮৩