Home ভ্রমন ঘুরে আসি ঝরনার গ্রাম দীঘিনালা

ঘুরে আসি ঝরনার গ্রাম দীঘিনালা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা। পাহাড়ের কোল জুড়ে বৃষ্টির ধারায় নেমে আসে পাহাড়ি ঝরনা। অরণ্যে ঢেকে থাকে এরকম চেনা-অচেনা অনেক জলধারা। বুনো ঝরনা তৈদুছড়া ১ এবং তৈদুছড়া ২, তোজেংমা, হরিণমারা, হাজাছড়া, শিবছড়ি এরকম কত যে ঝরনা ছড়িয়ে আছে দীঘিনালার ঘন অরণ্যে। এ যেন ঝরনার গ্রাম। আজ তাই চলুন ঘুরে আসি ঝরনার গ্রাম দীঘিনালা- 

ঝরনা থেকে বেরিয়ে আসা ঝিরির পুরো পথটা সবুজ আবরণে ঢাকা। কোথাও কোমর পানি, কোথাও বুক পানির পাথুরে ঝিরির পথ মাড়িয়ে চলতে চলতে হঠাৎ দেখা পাওয়া যায় জঙ্গলে ঢাকা এই পুরো ঝিরির পথ।

ঝরনার কাছে যাওয়ার আগে প্রায় লাগোয়া দুটো পাথুরে পাহাড়। এ যেন আরব্য উপন্যাসের ‘আলীবাবা’র জাদুকরী দরজার মতো, পাথুরে পাহাড় পেরিয়ে অবশেষে তোজেংমা ঝরনার দর্শন।

দুদিক থেকে আসা দুটি ঝরনার ধারা নেমেছে একই খুমে (পাহাড়িদের ভাষায় খুম মানে যেখানে ঝরনার ধারা এসে পড়ে)।

তোজেংমা যেতে পথে পথে দেখা যাবে দীর্ঘ পাহাড়ের ঢেউ। রৌদ্রময় আকাশে নীল রংয়ের ছড়াছড়ি। খরতাপ মাথার নিয়ে পাহাড়ি আদিবাসীরা জুমের ক্ষেতে ব্যস্ত। এই শুধু সাধারণ জুম চাষ নয়। যেন সারা বছরের স্বপ্ন বোনা হয় পাহাড়ে খাঁজে খাঁজে। দুর্গম পাহাড়ে আদিবাসীদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় জুমচাষ।

জুমক্ষেতের পাশ দিয়েই যেতে ঝিরি পর্যন্ত। ঝিরিপথ মানেই তো ট্রেকিংয়ের কষ্ট অর্ধেক কমে যাওয়া। তোজেংমা ঝরনায় যেতে বাকি পথটুকু এই ঝিরি পথেই হেঁটে যেতে হবে। বড়-ছোট পাথরে ভরা ঝিরির পথ। কোথাও কোথাও ঘন সবুজ আচ্ছাদন। বড় বড় লতা নেমেছে গাছের উপর থেকে। প্রধান ঝিরি থেকে আলাদা বাঁক নিয়ে তোজেংমা’র আসল ট্রেইল ধরে পথ চলতে হয়।

তোজেংমার পর্ব শেষ করে ঘুরে আসতে পারেন তৈদুছড়া। দীঘিনালার দুর্গম সীমানা পেরিয়ে সন্ধান পাবেন এই বুনো ঝরনার। জলপ্রপাতের সুরে পথ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। দুই পাহাড়ের মাঝে আড়াআড়িভাবে যুক্ত দুটি মরা গাছের কাণ্ড। নিচে গভীর জলপ্রপাত। নামতে হবে ভেজা মরা গাছের এই কাণ্ড বেয়ে। তবে পা ফসকে গেলেই গভীর খাদে হারিয়ে যেতে হবে।

এমনই ট্রেইল ধরে যেতে হয় তৈদুছড়া ঝরনায়।

ভরা বর্ষায় এই ঝরনা যৌবন পায়। তাই সে সময় গেলে সৌন্দর্য উপভোগ হয় বেশি। প্রথমেই কোমর সমান ঝিরির পথ। খরস্রোতা বোয়ালখালি খালের পথ ধরে সামনে এগুতে হয় অনেকখানি। ঝিরিতে খুব জোরে হাঁটার সুযোগ নেই।

হঠাৎ চোখে পড়বে বড় বড় পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা সাদা মেঘের দলছুট স্তুপ, সবুজ পাহাড়কে মুড়িয়ে রেখেছে চেনা মেঘের দল, পাহাড়ের কোল জুড়ে বড় বড় জুমের ক্ষেত। সবুজ বনের মাঝখানে ছোট্ট জুমের ঘর।

ঝিরির পথ শেষে দেখা মিলবে উঁচু পাহাড়ি পথের। এখন সবুজ পাহাড়ে ছোট্ট ট্রেইল বেয়ে উঠতে হবে। একটানা বৃষ্টিতে উপরে ওঠার পুরো পথটাই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ভেজা পথ বেয়ে দীর্ঘসময় নিয়ে ওঠার পর পাওয়া যাবে পাহাড়ের শীর্ষদেশ। এক নজরের পুরোটা আকাশ দেখে নেওয়া যায়। উঁচু পাহাড় থেকে নিচের ঝিরি পথ, ট্রেইল, জুমের ক্ষেত আর সবুজ বনকে বেশ লাগে।

তবে নেমে আসার সময় কিন্ত চেনা পথ ধরেই এগোতে হবে। তাই সঙ্গের গাইড যা বলবে তাই করুন। আমার কাছে অচেনা পথ বেয়ে নামতে নামতে কানে আসবে ঝরনার পানি আছড়ে পড়ার শব্দ।

পাহাড়ি পথ ছেড়ে আবার নামলাম ঝিরির পথে। বড় বড় পাথর ঝিরি জুড়ে। এক পাথর থেকে অন্য পাথরে পা মাড়িয়ে এগুতে হয়। পথের শেষে ঝরনার স্রোত যেন সবুজ পাহাড় থেকে সাদা রেখার মতো নেমে আসছে।

পাহাড়ের পাথর বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা দেখে মনে হবে যেন নিচে আসতে আসতে ক্রমশ বড় হয়েছে। পাথরের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে সাদা ফেনা মাথায় করে। সবুজ বনের মধ্যে তৈদুছড়ার এমন জলের স্রোত কেবল বর্ষাতেই দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন

প্রথমে পৌঁছাতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে সিএনজি বা মোটরবাইকে দীঘিনালা পৌঁছানো যায়। রাতে খাগড়াছড়িতেই থাকতে হবে। হোটেল গাইরিং, ইকোছড়ি ইন, ম্যাউনন্টেইন ইন, অরণ্য বিলাস, হোটেল আল আমিন ইত্যাদি মোটামুটি মানের।