Home ভ্রমন ঘুরে আসি বগা লেক

ঘুরে আসি বগা লেক

পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণপিয়াসীদের দারুণভাবে টানে। বছরের বিভিন্ন সময়ে অনেকেই চলে যান সেখানে। আর এই অঞ্চলেই রয়েছে কাপ্তাই লেক। যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লেক। জীবন-জীবিকার দিক দিয়ে এই কাপ্তাই লেকের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি সমাজ। সেখানে পর্যটকরা গিয়ে একাধিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের সঙ্গে, তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম ও দর্শনীয় স্থানেও পৌঁছে যান। তাদের প্রিয় দর্শনীয় স্থানে গিয়ে তারা লোকালয়ের যন্ত্রণা ভুলে যান। বান্দরবানের যতগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে এর অন্যতম হচ্ছে বগা লেক। চলুন তবে ঘুরে আসি বগা লেক-

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ফুট উপরে এর অবস্থান। আয়তন ১৫ একর। লেকটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। যে কারণে তাকে প্রকৃতির সেরা উপহারের একটি ভাবা হয়। বান্দরবান শহর থেকে ৭০ কিলোমিটর দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেক। পাহাড়ের চূড়ায় এর অবস্থান। এই লেকের পানি নীল রঙের। এর গভীরতা কত তা এখনো জানা যায়নি। তবে এখানকার স্থানীয় আদিবাসী বমদের বিশ্বাস যে, এর গভীরতা প্রায় ২৫০ ফিট। অবাক ব্যাপার এর আশপাশে কোনো জলের অস্তিত্ব নেই। তবে বগা লেক থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝরনার উৎস আছে। এই বগা লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ঘোলাটে থাকে। বগা লেকের চারপাশে প্রকৃতির বাগিচা দেখতে পাবেন। চার পাশে রয়েছে শুধু সবুজের সমাহার।

বগা লেকের জলে প্রবেশ করলেই যেন শরীর ও মনে প্রশান্তির পরশ চলে আসবে। তবে যারা সাঁতার জানেন না, তারা ভুল করেও বগা লেকে নামবেন না।  বগা লেকের কাছাকাছি বসবাস করেন বম ও খুমি সম্প্রদায়। তাদের যে কাউকে গাইড হিসেবে যদি নেন, তা হলে বগা লেকসহ আশপাশের সব দর্শনীয় স্থান তারা আপনাকে ঘুরে দেখাবেন।

বগা লেকের চারপাশে যে সব বৃক্ষ রয়েছে সেখানে নাম না জানা শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখতে পাবেন। এছাড়া এই দুর্গম অঞ্চলে ছোট আকারের হরিণ, বন বিড়াল, বড় আকারের বেজি, কয়েক প্রকারের বিষাক্ত সাপ দেখতে পাবেন। এই বগা লেক কিভাবে তৈরি হলো এটা নিয়ে এখানকার আদিবাসী সমাজের নানা ধরনের বিশ্বাস রয়েছে। যদিও এই সব কথার কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কিভাবে যাবেন

বান্দরবান সদর থেকে বাস বা চান্দের গাড়িযোগে প্রথমে রুমা সদর, রুমা থেকে বগা লেকের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। এরপর ছোট একটি বাজার রয়েছে। এই বাজারের নাম কমলা বাজার। এই বাজার থেকে আপনাকে ৩ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। যারা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল তারা সম্ভবত এতটা দুর্গম পথ হাঁটতে পারবেন না। তবে পথে যেতে যেতে আদিবাসী সমাজের সংগ্রামী জীবনের অংশবিশেষ দেখতে পাবেন এবং কিভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আদিবাসী সমাজ বেঁচে আছেন তা চাক্ষুষ দেখার সুযোগ পেয়ে যাবেন। যদি তাদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পান দেখবেন তাদের ভেতর কোনো জড়তা নেই, খুব সহজেই আপনাকে তারা আপন করে নেবেন।

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে একাধিক বেসরকারি পর্যটন সংস্থা অথবা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বান্দরবানের সব দুর্গম অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে বগা লেকেও নিয়ে যাবেন। কোনো পর্যটন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে গেলে আপনার সফরটা হয়ে উঠবে নিরাপদ। আর যদি কয়েকজন মিলে যান তবে অবশ্যই বান্দরবান শহর থেকে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইড সঙ্গে রাখবেন।

সতর্কতাঃ

সঙ্গে করে জাতীয় পরিচয়পত্রের বেশ কয়েকটি ফটোকপি, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক ট্যাবলেট ও ক্রিম, মানচিত্র ও সম্ভব হলে একটি গাইড বুক সঙ্গে রাখবেন। এই দুর্গম অঞ্চলে গিয়ে একা একা কোথাও যাবেন না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তা নিবেন। তাহলে আপনার সফরটা হয়ে উঠবে নিরাপদ ও আনন্দময়।