Home ইসলাম ও জীবন মোবারক হো মাহে রমজান

মোবারক হো মাহে রমজান

শুরু হলো মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি আর সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান । আহলান সাহলান মোবারক হো মাহে রমজান। বৃহস্পতিবার রাতে তারাবির নামাজ পড়ার পর ভোরে সেহরি খেয়ে শুক্রবার প্রথম রোজা রাখবেন বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

এ মহান মাসের ফজিলত ও বরকত অপরিসীম। রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্যকর্তব্য।

মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন পবিত্র রমজান মাসকে অনেক দিক দিয়েই বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ করে রেখেছেন। আল্লাহ পাক রমজান মাসের ফযীলত সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ করেন “পবিত্র রমজান মাস এমন একটি বরকতময় মাস, যে মাসে মানুষের হিদায়েতকারী সম্মানিত কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে এবং যা হিদায়েতের স্পষ্ট দলীল এবং সত্য মিথ্যা পার্থক্যকারী।”

রহমত ও বরকতের দিক দিয়ে রমজান মাস অন্য ১১ মাস থেকে ভিন্ন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথমাংশে রহমত, দ্বিতীয়াংশে মাগফিরাত অর্থাৎ ক্ষমা আর তৃতীয়াংশে নাজাত তথা দোজখ থেকে মুক্তি।’ (বুখারি)

রমজানের ফযীলতের ব্যাপারে ইমাম বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (র) হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (স) বলেছেন:‘যখন রমজান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে বন্দি করা হয়।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘শয়তানদেরকে শেকল পরানো হয়’। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূল (স) বলেছেন:‘রমজান মাসের প্রথম রাতে অবাধ্য জিন শয়তানদেরকে শেকল পরানো হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও খোলা হয় না।

এ মাস এমন একটি মাস, যে মাসে প্রথম দশ দিন হলো- ‘রহমত’, দ্বিতীয় দশ দিন হলো- ‘মাগফিরাত’ এবং তৃতীয় দশ দিন হলো- জাহান্নাম হতে ‘নাজাত’ পাওয়ার মাস। আর যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে তার কর্মচারীর কাজ কমিয়ে দিবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করবেন।” দুজাহানের মালিক আল্লাহ এরশাদ করেন, “রমজান মাস আমার মাস, এ মাসের পুরস্কার আমি নিজ হাতে প্রদান করবো।”

পবিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে “হযরত সালমান ফারসী (রা.) বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের নিকট খুতবা দিতেন। খুতবায় তিনি বলতেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের নিকট মহান রমজান মাস উপস্থিত। এ মাসে এমন একটি রাত্র রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র রমজান শরীফ মাসের রোযাকে ফরয করেছেন এবং রাত্রের বেলায় ক্বিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ নামাযকে সুন্নত করেছেন। যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে একটি নফল আমল করলো, সে যেন অন্য সময়ে একটি ফরয আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করলো। পবিত্র রমজান মাস হলো ছবরের মাস আর সবরের বিনিময় জান্নাত। এটা সহানুভ‚তির মাস। এই মাসে মু’মিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এ মাসে কোনো রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দান করবেন। আর সে রোযাদারের সমান ছাওয়াব লাভ করবে; অথচ রোযাদারের ছাওয়াবও কম হবে না। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের প্রত্যেকের তো এমন সামর্থ্য নেই, যা দ্বারা রোযাদারকে ইফতার করাবো? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- আল্লাহ পাক তিনি এরূপ ছাওয়াব তাকেও দান করবেন, যে এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবেন, সে বা তারা অনুরূপ সাওয়াব পাবেন। যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে তৃপ্তি সহকারে খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আমার হাউজে কাওছার হতে পানি পান করাবেন।

এ সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এটাই প্রতিয়মান হয় যে, পবিত্র রমজানের মর্যাদা ফাযায়িল-ফযীলত ও গুরুত্ব বিশ্বাসী মানব জাতীর জন্য অপরিসীম।