Home লাইফস্টাইল নতুন চাকরিতে করণীয়

নতুন চাকরিতে করণীয়

নতুন চাকরি হয়েছে। আর এ অবস্থায় কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। নতুন চাকরিতে মানিয়ে নেওয়া বিশেষ করে কাজটা শিখে ওঠা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এই বাজারে পছন্দসই চাকরি পাওয়া কিন্ত কম কথা নয়। আর যেই কিনা জুটল সেই চাকরি, কিছুদিন পর সেটিই কিনা আর ভালোলাগে না অনেকের! কেননা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আপনারও নিজেকে মনে হতে পারে ভিনগ্রহের বাসিন্দা! চাকরির শুরুতে অনেকেরই মুখোমুখি হতে হয় অন্য রকম সব অভিজ্ঞতার। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজন; সবই কেমন যেন অচেনা। শিক্ষাজীবনে যে ধরনের জীবনধারায় অভ্যস্ত, তার ছিটেফোঁটাও নেই কর্মক্ষেত্রে। আর সেখানেই শুরু হয় সমস্যা। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো ঠিকঠাক সামলাতে না পারলে কর্মজীবনের শুরুতেই হোঁচট খেয়ে খেই হারাতে পারেন আপনি। আর জীবনের নতুন এই অধ্যায়ে কিছু বিষয় এড়িয়ে চললে পেতে পারেন সাফল্য।

চাকরির শুরু

চাকরির শুরুতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় চারপাশের সহকর্মীদের ঘিরে। শুরুতে আপনার মনে হতে পারে, সবাই যেন দূরের মানুষ। মনে হতে পারে, এ সম্পর্কটা যেন পেশাগত কৃত্রিমতার। কারণটাও সহজ, আর সেটি হল সহপাঠীদের মতো নিখাদ বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সহকর্মীদের সঙ্গে গড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সমিতির সাবেক সভাপতি মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ মোশারফ হোসেন বলেন, কর্মক্ষেত্রে সবাই সমবয়সী কিংবা সমমনা হবে—এমনটি ভাবা ঠিক নয়। নতুনদের ধীরেসুস্থে সব কিছুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নতুন চাকরিতে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়েই তৈরি করে নিতে হয় নিজের অবস্থান।

The new job to be done

বেতন নয়, কাজে মনোযোগ

শুরুতেই ভালো বেতনে চাকরি পাওয়াটা রীতিমত সৌভাগ্যের। তবে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের চেয়ে বেতন নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর হয় না কখনোই। বরং ক্যারিয়ারকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতেও পারে এটি। অফিসে আপনার কী কাজ, বসের কাছ থেকে তা শুরুতেই বুঝে নিন। সব কিছু আয়ত্তে আনার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের সহযোগিতা দরকার হবে আপনার। অফিসের কর্তাব্যক্তিরা এ সময়টাতে নানা দিকনির্দেশনা দিতে পারেন আপনাকে। তাদের আদেশ ও পরামর্শ আমলে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা এ সময়টাতে আপনাকে হতে হবে মনোযোগী ছাত্র। তাহলে দেখবেন, কিছু দিনের মধ্যেই সব কিছু চলে এসেছে আপনার হাতের মুঠোয়।

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাহিনয়্যাত এ করিমের পরামর্শ, ‘যে দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছে সেটি ঠিকঠাক পালন করতে হবে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দেখাতে হবে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা। এ দুটি বিষয় আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।’

সমস্যা নয়, সমাধান

বসের কাছে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে এমনটি কখনই ভাববেন না। অনেকেই আবার প্রায়ই নানা সমস্যা নিয়ে বসের সামনে হাজির হন। চাকরির শুরুতে এ প্রবণতাটা থাকে বেশি। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, কর্মী হিসেবে বস আপনার কাছ থেকে সমাধান চান, তবে কেবল সমস্যার কথা শুনতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। তাই সমস্যাটি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন, একটা সম্ভাব্য সমাধান বের করুন, এবং তারপর বসের কাছে সেই প্রস্তাব নিয়ে যান।

আগ্রহ

ডায়মন্ড মেলামাইনের নির্বাহী পরিচালক মিনহাজ আহমেদ আদর জানান, পরিবার-পরিজন পড়াশোনার পাঠ চুকাতে না চুকাতেই চাকরিতে ঢোকার জন্য চাপ দেয়। এতে অনেকে হুট করে এমন জায়গায় চাকরি নেন, যেখানে তাঁর আগ্রহ নেই। এ ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানে আপনার আগ্রহ আছে কিংবা যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে পারবেন—এমন জায়গায় একটু রয়েসয়ে কাজ নেওয়ার পক্ষে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

মানিয়ে নেওয়া

সবার মনমানসিকতা তো আর এক নয় তাই চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর পরই দেখবেন সহকর্মীদের কেউ হয়তো টিপ্পনী কাটছে। আবার  নিছক মজা করার জন্যও টিপ্পনী কাটতে পারেন কেউ কেউ। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টিকে সহজভাবে নিন। এমন অবস্থা খুব বেশি দিন থাকে না। নতুন কর্মক্ষেত্রে মনে হতে পারে, সবাই পর। নিজেকে একা ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর বসার জায়গাটি কোথায়, কী কাজ তাঁকে করতে হবে। এ ছাড়া কাজ করার কিছু অনুষঙ্গ, যেমন—কাগজ, পিন, স্ট্যাপলার ইত্যাদি কিংবা কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড পেতেও সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সহকর্মীর সহযোগিতা চান।

নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কাজটি কিন্ত আপনাকেই করতে হবে। এমন কয়েকজন থাকবেনই, যাঁরা আপনার যোগ দেওয়ায় হয়তো খুশি হতে পারেননি। ঔদ্ধত্য কিংবা উপেক্ষা করে বিরোধিতার আগুনও উসকে দেবেন না। অফিসের সবার মন জয় করুন আপনার ব্যবহার দিয়েই।

সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন

ইউনিলিভারের টেরিটোরি ম্যানেজার আকিবুল ইসলাম মনে করেন, অনেকেই আছেন, যাঁরা অফিসের ভেতরে কিংবা বাইরে সহকর্মীদের সঙ্গে মোটেও আড্ডা দেন না। নয়টা-পাঁচটা অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে খুব একটা কথাও হয়ে ওঠে না অনেকের। এটা মোটেও ঠিক নয়। নতুন সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অন্যরা এগিয়ে না এলে এগিয়ে যেতে হবে নতুনদেরই।

The new job to be done (3)

বাড়িয়ে নিন নিজের দক্ষতা

চাকরির শুরুতে কাজের আপনার দক্ষতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কাজের জায়গাগুলো আপনাকে বুঝে নিতে হবে ধীরে ধীরে, সাথে সাথে বাড়িয়ে নিতে হবে দক্ষতাও। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর অফিসে আসুন নিয়ম মতো। আবার হাতের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে সময়মতো অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ুন। যোগ্যতা ও পেশাদারি দক্ষতা আপনার থাকতেই পারে, এ নিয়ে অহমিকা করবেন না কখনো। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর যত বেশি আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শিখে নিন। কেননা তা আপনাকে সহায়তা করবে।

শিক্ষানবিশের ওপর কিন্তু কর্তৃপক্ষের তীক্ষ নজর থাকে। দায়িত্ব যাই হোক, নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখবেন না কখনই। বাড়তি দায়িত্ব তুলে নিন নিজের কাঁধে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের অন্য দপ্তরে কী কাজ হচ্ছে, সেটাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন। শিক্ষানবিশ সময়ে কতটা লাভবান হলেন, তা কিন্ত পুরোটাই আপনার ওপরই নির্ভর করছে। আপনার যোগ্যতা ঠিকমতো কাজে লাগানো হচ্ছে না, কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, এতে ভেঙে পড়বেন না। একসময় দেখবেন, কাজের মূল্যায়ন ঠিকই পেয়ে যাবেন।