Home ভ্রমন শীতের কুয়াশায় কুয়াকাটা

শীতের কুয়াশায় কুয়াকাটা

ষড় ঋতুর বাংলাদেশে চলছে হেমন্তকাল। পুরপুরি শীতকাল না আসলেও চলে আসেছে শিতের আমেজ। শীতের সকাল মানেই কুয়াশা আর আবছায়া, শীতকাল মানেই ভ্রমন পিপাসুদের আনন্দ যাত্রা। অনেকেই এ সময়কে বলেন ট্র্যাভেল সিজন। তাই হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের অপূর্ব সুন্দর এক সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে। একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায় বলে দেশের অন্যান্য সমুদ্রসৈকত থেকে এটি ভিন্নতর। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নির্জনতা । ঢেউ এর গর্জন, তীরে আছড়ে পরা আপনাকে অন্ন জগতে নিয়ে যাবে।

সাগরের ঢেউয়ের শব্দ, জেলের জালে তাজা মাছের লম্ফঝম্ফ—এ ছবি সৈকতজুড়ে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে সোনারচরের হরিণের পাল, আছে শুঁটকিপল্লীর কর্মব্যস্ততা। আকাশের রঙে নীল-লাল হয় সাগরজল। সৈকতের পড়শি রাখাইনপল্লী। রাখাইনদের তৈরি তাঁতকাপড় আর শামুক-ঝিনুকের বাহারি অলংকার চোখ জুড়াবেই। আছে ঐতিহাসিক কুয়া, সেটিও রাখাইনপল্লীতে। পাশেই রয়েছে বৌদ্ধ বিহার।

সমুদ্রসৈকত

কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতটি বেশ পরিচ্ছন। প্রায় আঠারো কিলোমিটার দীর্ঘ এবং তিন কিলোমিটার প্রশ্বস্ত এ সৈকতটি। পুরো সৈকতের কোল ঘেঁষেই দেখা যায় কমবেশি নারিকেল বিথী। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ জায়গা থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেটা সৈকতের দুই প্রান্ত থেকে। ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাঁক থেকে আর সূর্যাস্ত দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে। সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে গঙ্গামতির খাল। এর পরেই গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। পুরো সৈকতজুড়েই সারা বছর দেখা মিলবে মাছ শিকারিদের বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরার দৃশ্য। কুয়াকাটার সৈকতে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মটর সাইকেলের ব্যবস্থা।

Kuakata

যা দেখতে ভুলবেন না

কুয়াকাটাতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে। সৈকতের কাছেই রয়েছে একটা বৌদ্ধ মন্দির যা কিনা আপনার মন কেড়ে নেবে। এই বৌদ্ধ মন্দিরের পাশেই রয়েছে কুয়াকাটার সেই বিখ্যাত কুয়াটি। পাশেই আছে রাখাইন মার্কেট। কেনাকাটা যা করার এখান থেকেই করতে পারেন।

সৈকত থেকে ৬ কিমি দূরে মিছরি পাড়াতে রয়েছে ৩ তলা সমপরিমাণ উচ্চতার আরেক বৌদ্ধ মূর্তি। ঝাউবন থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে নয়নাভিরাম ইকো পার্ক।

সূর্য উদয় হল কুয়াকাটার আরেক সৌন্দর্য। যারা কুয়াকাটা আসেন তারা কেউ-ই এই দৃশ্যটা মিস করেন না। সূর্য উদয় দেখতে যেতে হবে সৈকত থেকে কিছুটা দূরে কাউয়ার চর নামক জায়গায়। এছাড়া কাউয়ার চরে দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি।

আর সমুদ্রের পানি যদি গায়ে লাগাতে চান, তাহলে বিনা দ্বিধায় নেমে পড়তে পারেন সাগরের পানিতে। এখানে কক্সবাজারের মত চোরাবালি বা চোরা খাদের মত কিছু নেই। সৈকতে যারা বাইক চালাতে চান তাদের জন্যও আছে সুখবর। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা করে ঘুরতে পারবেন। সবশেষে প্রিয়জনের সাথে এক মনে দেখে নেবেন সূর্য অস্তের সেই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্য।

Kuakata

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রুটে চলাচল করে এমভি দ্বীপরাজ, সৈকত ইত্যাদি লঞ্চ। এসব লঞ্চে প্রথম শ্রেণীর দ্বৈত কেবিনের ভাড়া ৮৫০-১০০০ টাকা। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার বাস ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল এসে সেখান থেকেও বাসে চড়ে কুয়াকাটা আসা যায়। ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসও চলে কুয়াকাটার পথে। কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ছাড়ে সরকারি পরিবহন সংস্থার বাস। আর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার পথে চলে সাকুরা, সুরভী, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের বাস। ভাড়া ৪৫০-৫৫০ টাকা।

থাকা খাওয়া
কুয়াকাটা থাকার জন্য হোটেলের অভাব নেই তবে উচ্চ মান সম্মত হোটেলের সংখ্যা খুবই কম। ৩-স্টার মানের হোটেল আছে মাত্র দুটো। এছারও থাকার জন্য আছে সরকারি ডাকবাংলো। ভাল হোটেলেও নাম করে পরতে পারেন দালাল খপ্পরে। নিজে রুম না দেখে হোটেলে উঠবেন না। আর অগ্রীম টাকা ভুলেও দেবেন না।

খাবারের জন্য কুয়াকাটাতে রয়েছে অনেক রেস্তোরা। যেখানেই খাবার খান অথবা অর্ডার করবেন অবশ্যই দামটা আগে জেনে নেবেন।