অপরূপা বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতুর মায়ায় বছরের বারো মাসই প্রকৃতি ভিন্ন রূপ মেলে ধরে এই দেশে। আসছে কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে শীতকাল। আর শীত মৌসুমই হলো পাহাড়-অরণ্যের জেলা বান্দরবানের দুর্গমাঞ্চলগুলোর দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। সারা দেশের সঙ্গে মিলিয়ে তেমনই অপরূপা বান্দরবান। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রকৃতি এ সময় নিজেকে মেলে ধরে আপন সাজে।
বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়েছে এরই মধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। আর তাই এবারের পর্যটন মৌসুম শুরু হতে না হতেই নানা হোটেল-মোটেল আর গেস্ট হাউসে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। এবারও প্রতিবছরের মতো শীতকে সামনে রেখে বান্দরবানে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করা যায়।
পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সব থেকে দর্শনীয় স্থানগুলো
নীলগিরিঃ যদি সত্যিকার অর্থে মেঘের ওপর দাঁড়িয়ে মেঘৈর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে নীলগিরি। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের দূরত্ব ৪৮ কি:মি: এবং এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এখানে রয়েছে কনফারেন্স হল, রেস্টুরেন্ট ও কটেজ। নীলগিরি ভ্রমনের পথে রাস্তার পাশ থেকে নেমে যাওয়া বিস্তির্ণ গিরিখাত ও মেঘের ছোটাছুটি যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
স্বর্ণমন্দিরঃ শহর থেকে মাত্র ৪ কি:মি: উত্তরে বালাঘাটে অবস্থিত বৌদ্ধ ধাতু জাদি যা স্বর্ণমন্দির নামেই বেশী পরিচিত। মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড এর বৌদ্ধমন্দির গুলোর আদলে তৈরি এই মন্দিরে প্রবেশ করলে একটি শান্তিময় পরিবেশ আপনাকে স্বাগত জানাবে। দেশের সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই মন্দিরটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয়।
সাঙ্গু নদীঃ বান্দরবান শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি সাঙ্গু নদীর দু-কূলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপরূপ। নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত বোটে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার মজাই আলাদা। নদীপথে ভ্রমণ করলে নদীর তীরে পাহাড়িদের বিশেষ কায়দায় তৈরি টংঘরগুলো দেখা যায়। সেই সাথে উঁচু পাহাড়ের কূল ঘেঁষে বয়ে চলা সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হওয়ায় মতো। শহর থেকে একটু দূরে ভাটির দিকে শীতামুড়া পাহাড় প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি দেখে ভোলার নয়। নদী পথে ভ্রমণের জন্য শহরের বাজার সংলগ্ন সাঙ্গু ব্রিজের নিচে এবং কালাঘাটা এলাকায় পাওয়া যায় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত বোট।
শৈল প্রপাত ঝর্ণাঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি শৈল প্রপাত। বান্দরবান-রুমা এবং থানছি সড়কের ৫ মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। শহর থেকে শৈল প্রপাতে যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈল প্রপাত ঝর্ণার হিমশীতল পানি সর্বদা বহমান। মনমাতানু এ দৃশ্য স্মৃতিতে ধরে রাখার মতো। রাস্থার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এখানে পর্যটকদের জন্য স্থানীয় পাহাড়ি বম জনগোষ্ঠী কোমর তাঁতে বুনা কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে। শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়।
এছাড়াও ঘুরে বেড়ানোর জন্য দর্শনীয় স্থানগুলো
- মেঘলা
- নীলাচল
- মিলনছড়ি
- চিম্বুক
- তাজিলডং
- কেওক্রাডং
- জাদিপাই ঝরণা
- বগালেক
- মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স
- প্রান্তিক লেক
- ঋজুক জলপ্রপাত
- নাফাখুম জলপ্রপাত
ঢাকা থেকে সরাসরি এসি-ননএসসি বাসে আসতে পারবেন বান্দরবান। পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউজ আছে। হলিডে ইন রিসোর্টে এসি-ননএসি দুই ধরনের রুম ভাড়া পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাবুতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে বেড়াতে ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে দুই একজনের জন্য রিজার্ভ পর্যটকবাহী গাড়িগুলোর ভাড়া অনেকটা বেশি। সেক্ষেত্রে দলবল নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে বান্দরবান ঘুরে বেড়াতে এলে খরচ অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়। সিএনজি এবং মহেন্দ্র গাড়িতে করেও পর্যটন স্পটগুলো সহজে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া বেশির ভাগ পর্যটন স্পটের রুটে বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সেগুলোতে করে যাতায়াত করলে খরচ আরো কমবে। তবে সময় লাগবে একটু বেশি।
শুধু শীত নয়, বর্ষায় পাহাড় আরো সবুজ ও বৈচিত্র্যময়। পর্যটনশিল্পের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এ জেলায়, যোগাযোগব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা এবং আবাসন ক্ষেত্রেও। নতুন নতুন বেশকিছু কটেজ, হোটেল-মোটেল এবং গেস্টহাউস হয়েছে।