আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে ঈমানদাররা তোমরা পরিপূর্ণ তাকওয়া (খোদাভীতি) অর্জন কর আর মুসলিম (শান্তিপ্রিয় মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না। কিন্ত এই ‘তাকওয়া’ শিখব কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ বলেন, ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু,হে ঈমানদাররা, ইত্তাক্বুল্লাহা, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, ওয়া কুনু মাআসসাদেকীন, আর তাকওয়া শিখার জন্য সিদ্দিক বা আরেফদের সাথী হয়ে যাও। আর নিজেকে সমর্পিত হতে শেখায় রোজা
আল্লাহ দয়াময় রহমানুর রহিম রমজানের রোজা ফরজ করে সামষ্টিকভাবে তাকওয়া শিখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আল্লাহ মোমেনদের লক্ষ্য করে কালামে পাকে বলেন, ‘কুতিবা আলাইকুমুসসিয়াম’ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, ‘কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম, যেমন তোমাদের আগের কাউমের ওপরও ফরজ ছিল, ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’।
তাকওয়া কী? এর অর্থ ভিন্ন ভাষায় এক শব্দে প্রকাশ করা মুশকিল। তবে পরহেজগারি বা পাপ থেকে বেঁচে থাকার উপায়গুলো অর্জন করাকে মোটামোটিভাবে আমরা বুঝে থাকি।
খলিফাতুর রাসূল আমিরুল মোমেনিন উমর ফারুক (রা.)-এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁটাযুক্ত রাস্তায় মানুষ যেমন সতর্কতার সঙ্গে চলে দুনিয়ার জীবনে তেমনি সতর্কতার সঙ্গে চলার নামই ‘তাকওয়া’।
নানা ফন্দি-ফিকির রহস্যে বোঝাই এ দুনিয়ায় আমরা কোনটা তাকওয়া কোনটা তাকওয়া নয় কী করে বুঝব? এর উত্তর আল্লাহ খুব সহজেই কালামে পাকে দিয়েছেন, ‘লা তা’মালিল আবসার চোখের দেখায়ই কিছু করে বস না, ওয়ালাকিন তা’মাল কুলুবুল্লাতি ফিসসুদুর’ বরং তোমার হৃদয় চিত্ত দিয়ে তা উপলব্ধি করে আমল কর। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘ফা আলহামাহা ফুজুরাহা ওয়া তাকওয়াহা’ আল্লাহ কোনটা মন্দ আর কোনটা ভালো তা তোমার হৃদয়েই ইলহাম বা জ্ঞাত করে দেন। কিন্তু জগতের নানা ফন্দি-ফিকির প্রলোভনের কারণে আমাদের অনেক সময় তা বুঝে আসে না। এই বুঝে আসে না বলেই ফকির লালন শাহ আক্ষেপ করে বলেন, ‘অবোধ মন তোরে আর কী বলি/পেয়ে ধন সে ধন সব হারালি… মহাজনের ধন এনে/ ছিটালিরে উলুবনে… কী হবে নিকাশের দিনে সেই ভাবনা কই ভাবিলি… করলি ভালো বেচাকেনা/ চিনলে না মন রং কী সোনা? এই চেনার জন্যই এই জানার জন্যই আমাদের আল্লাহওয়ালাদের সাথী হয়ে যেতে হয়।
রোজা কী? শরীয় দৃষ্টিতে সুবেহসাদেক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার জৈবিক কামনা-বাসনা বন্ধ রাখার নামই রোজা। সাইয়েদুৎতায়েফা হাসান বসরীর ভাষায় ‘রোজা রেখে ফাহেসা ও অনৈতিক চিন্তা চেতনা থেকে দূরে না থাকলে আত্মিক রোজা হয় না’। প্রত্যেক বস্তুরই জাহের-বাতেন দুটি দিক আছে, দুটির সমন্বয়েই বস্তুটির পূর্ণতা লাভ হয়।
হাদিস শরিফে আছে ‘ওয়া মান লাম ইয়াদ্বাআ’ কাওলাজ জুরে ওয়া আমালা বিহি ফা লাইসা লিল্লাহি হাজাতান ফি আইইয়াদ্বা’ আত্বয়ামাহু ওয়া শারাবাহু’। ‘যে রোজা রেখে মিথ্যা এবং পরচর্চা থেকে দূরে থাকতে পারল না তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন আল্লাহর কাছে নেই’।
হজরত ওমর (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) রমজান শুরু হওয়ার একদিন আগে সব লোকদের জমা করে এ খুতবা দিয়েছিলেন- ‘হে লোকসকল পবিত্র রমজান এসেছে এ জন্য ভালো কাপড় নিয়ে তৈরি হও, তার তাজিম ও হুরমত কর, কারণ আল্লাহ পাকের কাছে এত বড় নেকি আর কোনো কাজে নেই। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং জিকির বেশি পরিমাণে কর। যে এই পবিত্র মাসে খালেস দিলে কোরআন পড়বে এক হরফের পরিবর্তে আল্লাহ একটি বাগান বেহেশ্তে দেবেন, ওই বাগানের গাছ এত বড় হবে তার মেসাল দুনিয়াতে নেই। প্রত্যেক ডালের নিচে ৭০ হাজার ফেরেশ্তা উপস্থিত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত দোয়া এস্তেগফার করবে। এই রোজা এক সুরাত হয়ে শাফায়াত করবে আর তাকে নিয়ে জান্নাতে দাখিল হবে। হাল আমলে রমজানের প্রস্তুতিকে আমরা বানিয়ে নিয়েছি খাওয়া-দাওয়া পোশাক-আশাকের ইন্তেজাম। ফলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।