যুগ যুগ ধরে বাঙালির মুখে এক প্রচলিত প্রবাদ হল, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। ধীরে ধীরে বিপুল জনসংখ্যার চাপে সেই প্রবাদ আজ অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। কিন্ত তারপরও এই ভাত মাছ এখনও আমাদের প্রধান খাদ্যের আসন ধরে রেখেছে।
বিপুল প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের আঁধার হিসেবে মাছের সুপরিচিতি মোটামুটি সবারই জানা। একদিকে প্রোটিন আমাদের শরীর গঠনে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় মজবুত করে। আর এটাই ছিল এতোদিন আমাদের জানা মাছের উপকারী দিক।
কিন্ত ইদানিং কালে বিজ্ঞানীরা এটা ছাড়াও অন্যরকম আবহের ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজকের এই পৃথিবীতে বিপুল হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে পরিবেশ দূষণসহ নানা অব্যবস্থাপনা। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তা প্রভাব ফেলছে আমাদের দৈনন্দিন জনজীবনে। পরিবেশের বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান নানাভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, মাছে অবস্থিত ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সয়াবিন ও পালংশাকেও এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ জাতীয় খাবার খেলে শরীরে ওমেগা- ৩’র মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরিবেশ দূষণের কারণে হওয়া অকিসডেটিভ স্ট্রেস এবং শারীরিক প্রদাহে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
পরিবেশে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বিভিন্ন মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর শরীরে যত টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ততই শরীর ভাঙতে শুরু করে। তাই এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা আছে। এইসব বিষাক্ত উপাদানের শরীরে ঢুকার কোনো জ্ঞাত পূর্বাভাস নেই। যেকোনো সময় যেকোনো উপায়ে এরা শরীরে ঢুকে যেতে পারে। তাই এখন থেকেই শরীরকে রক্ষা করার শপথ নিতে হবে। আর তা যদি আমরা ঠিক মতো পালন করতে না পারি তাহলে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবননাশের আশংকা আছে। তাই নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুসাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই আমাদের সতর্কতামূলক মনোভাব গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তাছাড়া ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের আরও অনেক গুণ রয়েছে। প্রতিদিন এই উপাদান্ সমৃদ্ধ খাবার খেলে সার্বিকভাবে শরীর ভাল হতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন ২-৪ গ্রাম ওমে্গা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়া একান্ত প্রয়োজন।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। তাই প্রতিদিন কম করে হলেও ছেলে মেয়েদের মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর তাতেই আমরা দেশকে একটি রোগমুক্ত জাতি উপহার দিতে পারবো।