পবিত্র মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে একান্ত করে পাবার মাস এবং সকল পাপ ক্ষমার মাস। মহান আল্লাহু পাক রাব্বুল আলামীন মহিমান্বিত রমজান মাসে বান্দার জন্য রেখেছেন তিনটি সুবর্ণ সুযোগ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাত প্রাপ্তির। (মিশকাত)
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার দ্বিতীয় ১০ দিনকে বলা হয় মাগফিরাতের দশক অর্থাৎ ১১ থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত মাগফিরাত; যার অর্থ ক্ষমা। রমজান মাসের মধ্য এ দশককে মুসলমানদের গুনাহ মাপের জন্য নির্ধারণ করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কারো কারো মতে, প্রথম দশ রোজা পালনের পর বান্দারা ক্ষমার পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেন।
পবিত্র এ রমজানজুড়ে গুনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করেন মহান আল্লাহ। তবে মধ্য এ দশকে ক্ষমাপ্রার্থী বান্দাদের ব্যপকভাবে ক্ষমা করেন তিনি। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনায় সে তথ্য পাওয়া যায়।
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, একবার রমজানের কিছু পূর্বে একদিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করলেন, তোমাদের সামনে রমজান আসন্ন। এ মাস অত্যন্ত বরকতের মাস। আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেনএ মাসে । রহমত বর্ষণ করেন এবং গুনাহ মাফ করেন (তাবরানী)।
মাহে রমজানের প্রতি দিবা-রাত্রিতেই অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল হয়। এ মাসে পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোজাদারের ক্ষমা অবশ্যম্ভাবী, প্রার্থনাকারী ব্যর্থ মনোরথ হবে না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন—হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থাম, চোখ খোল। তিনি আবার ঘোষণা করেন, ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’
আমরা যদি হযরত রসূল করিম (সা.)-এর জীবনে রমজানের দিনগুলোর দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই তিনি (সা.) রমজানে কত বেশি নফল ইবাদত আর দান খয়রাত করতেন। অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে মহানবী (সা.)এর ইবাদত আর দান খয়রাতে আরো বেশি গতি লাভ করতো আর পবিত্র মাহে রমজানের রাতগুলো মহানবী (সা.) অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতেন। মহানবী (সা.)-এর নফল নামাজ আর দোয়ার আহাজারিতে জেগে থাকতো নিঝুম রাতগুলো। এছাড়া এ মাসে তিনি (সা.) কোরআন শিক্ষা, শিখানো ও শোনার প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন।
তাই মাগফিরাত লাভে প্রত্যাশী মুমিন বান্দার উচিত, এই দশকের সন্ধ্যা থেকে তারাবি নামাজ যথাযথ আদায় করে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করা; অসহায় ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানোর মাধ্যমে গুনাহ মাফের চেষ্টা করা; রাতের ইবাদাত–বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে রাতে আল্লাহর সাহায্য কামনায় হাদিসের ওপর আমল করা। তবেই মাগফিরাত বা গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করা সম্ভব।