বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘বুড়া বয়সে বুদ্ধি লোপ।’ কথাটা যে একেবারে মিথ্যা তা কিন্তু নয়। বরং এটি অনেকটা অনির্বাযই বলা চলা যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার মস্তিষ্ক সংকুচিত হতে থাকবে। একে বলা হয় সেরেব্রাল অ্যাট্রপি, যার প্রভাব পড়ে স্নায়বিক যোগাযোগের ওপর। ফলে কমে যাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। তাছাড়া প্রতিদিন গড়ে আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় তিন লক্ষ ব্রেইন সেল নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস আপনার আমার ব্রেইন সেলকে আরও তাড়াতাড়ি ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু তা হচ্ছে একান্তই আপনার আমার অজান্তে। ধীরে ধীরে এই অভ্যাসই আপনার আমার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখন থেকেই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাবে যেসকল অভ্যাস তাদেরকে ঝেঁড়ে ফেলে দিতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাবে যেসকল অভ্যাস সেগুলো সম্পর্কে।
সতেজ ও সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য আমাদের প্রতিদিন কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো আপনাদের অবগতির জন্য আলোচনা করা হলোঃ
রাত্রি শয়নের আগে মোবাইল ব্যবহারঃ বৈদ্যুতিক গেজেট যেমনঃ মোবাইলফোন, কম্পিউটার থেকে নির্গত আলোকরশ্মি চোখের রেটিনাকে সরাসরি আক্রমণ করে যা সরাসরি আপনার ব্রেনে প্রভাব ফেলে। ফলে ঘুমানোর আগে মোবাইলফোন ব্যবহার করলে এগুলো আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় থাকার সংকেত দেয়। যা আপনার আরামের ঘুমকে ব্যাঘাত ঘটায়।
ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারঃ অসুস্থতা বাদে নেশা বা অন্য কোনো কারণে ওষুধ গ্রহণ অপ্রয়োজনীয়। এটি দ্রুত মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে। তাছাড়া, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত, হতাশা, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তার মতো সরাসরি প্রভাব ওষুধ ব্যবহারের ফলেই হয়ে থাকে। এর দীর্ঘ ব্যবহারে আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
মানসিক চাপ নেয়াঃ মানসিক চাপের ফলে নিঃসৃত হয় কর্টিসল হরমোন যা ব্রেনের ক্ষতিসাধন করে।
কম পানি পান করাঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের সংকোচনের হওয়ার পেছনে পানিশূন্যতার একটি দীর্ঘ ভূমিকা রয়েছে। পানিশূন্যতা মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলের গতিকে ব্যাহত করে। মনে রাখবেন, আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোর প্রধান উপাদান পানি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করা উচিত।
কম ঘুমানোঃ আপনার শরীরের অন্যান্য কোষের মতো মস্তিষ্কের কোষও নানাবিধ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই ক্ষতি মস্তিষ্ক পুষিয়ে নেয় আপনার ঘুমের সময়। তাই কম ঘুমের ফলে মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন আপনি। প্রতিদিন কম ঘুমানোর ফলে ভবিষ্যতে আপনার মস্তিষ্ক সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। এমনকি যদি আপনি টানা দুদিন ভালোভাবে না ঘুমান, তবে অফিস বা বাসায় আপনার কাজের পরিমাণ কমে যায়।
জাঙ্কফুডঃ ফাস্টফুডের আরেকটি ইংরেজি নাম জাঙ্কফুড। আর এই জাঙ্কফুড আপনার মস্তিষ্ক এবং হৃদয় দুটির জন্যই ক্ষতিকর। প্রক্রিয়াজাত, মসলাদার জাঙ্কফুড ধীরে ধীরে আপনার মস্তিষ্কের কোষকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
আলস্যঃ শারীরিক ব্যায়াম যে শুধু শরীরের জন্য ভালো, তা কিন্তু নয়। শারীরিক ব্যায়ামের ফলে অফিস বা বাসায় কাজের ক্ষেত্রে আপনার মস্তিষ্ক আরো ধারালো হয়ে ওঠে। কিন্তু আলস্য আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং এর সংকোচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
অপুষ্টিঃ অপুষ্টি আপনার মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। শুধু বাঁচার জন্য খেলাম নীতি পরিহার করে খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করা উচিত। আপনার মস্তিষ্কের ভালোভাবে কাজের জন্য পুষ্টির অধিক প্রয়োজন।
ধূমপানঃ ধূমপান শুধু যে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে তা কিন্তু নয়, এটি বিপজ্জনক গতিতে আপনার মস্তিষ্কের সংকোচন সাধন করে। এমনকি অ্যালকোহলও আপনার মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া সব ধরনের উত্তেজক নেশাজাতীয় দ্রব্য মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক।