সৃষ্টি কর্তার অপরূপ সৃষ্টির নির্দশনের একটি হচ্ছে ঝর্ণা। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশ বিদেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। সবুজ প্রকৃতি, শ্যামল ছায়া, পাহাড়ি ঝর্ণা দেখে মনটা ভরে যায় সবারই। গ্রীষ্মের তাপে ক্লান্ত শরীর ও মনকে সিক্ত করতে পর্বতপাড়ে ঝর্ণার বিকল্প কিছু নেই।
কবি বলেছেন –
“বাংলারে তোর সিগ্ধসুধার এসেছি পর্বতপাড়ে, ঝর্ণা!
সে তুই ভেজালি আমায় সিক্ত বর্ষাধারে!”
না, পাঠক কবির এ আকুতি মিথ্যে নয়। আজ আমরা জানবো বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ঝর্ণা ধারা সম্পর্কে। যেখানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত মানুষ ঝর্ণার পানিতে একটু গা ভাসিয়ে নিতে ছুটে যাচ্ছেন।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা
খৈয়াছড়া ঝর্ণা চট্টগ্রামের মিরসরাই পাহাড়ে অবস্থিত। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে এই ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। একে বাংলাদেশের ‘ঝর্ণা রানী’ বলা হয়।
আর এই ঝর্ণা দেখতে এসে মুগ্ধ হচ্ছে দেশ বিদেশের পর্যটকরা। তারা অবাক হচ্ছেন এই ভেবে, এখানকার পাহাড়ী অরণ্যে এতোকাল কিভাবে লুকিয়ে ছিল এমন নান্দনিক অপরূপ সুন্দর ঝর্ণা?
মাধবকুন্ড ঝর্ণা
বাংলাদেশের সুউচ্চ জলপ্রপাত মাধবকুন্ড। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা নামক উপজেলায় এই সুন্দর নয়নাভিরাম জলপ্রপাতটির অবস্থান। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের যা পাথারিয়া পাহাড় নামে পরিচিত। এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে।
তৈদুছড়া ঝর্ণা
অসাধারণ এই ঝর্ণাটি ‘শিবছড়ি ঝর্ণা’ নামেও পরিচিত। তৈদুছড়া ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত। ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পড়ছে পাথুরে ভূমিতে। অন্য সকল ঝর্ণার মত এর পানি সরাসরি উপর হতে নিচে পড়ছে না। পাহাড়ের গায়ে সিড়ির মত তৈরি হওয়া পাথুরে ধাপগুলো অতিক্রম করে নিচে পড়ছে।
জাদিপাই ঝর্ণা
বান্দরবান এর জাদিপাই পাড়ায় অবস্থিত এই ঝর্ণা। ঝর্ণার প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে এক মাদকতাময় পাগল করা সুন্দর রুপ। প্রায় ২৫০ফুট উপর থেকে অবিরাম ঝরে পড়া পানির তিনটি ধাপে সূর্যকিরণ পড়তেই তৈরি হয় বর্ণিল রংধনু। সবার চোখের আড়াল করে বান্দবানের গহীন অরণ্যে বয়ে চলা এই ঝর্ণার নাম জাদিপাই।
হামহাম ঝর্ণা
হাম হাম কিংবা হামহাম বা চিতা ঝর্ণা, বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝরণা। শ্রাবনের প্রবল বর্ষনে যখন পুরো জঙ্গল ফিরে পায় তার চিরসবুজ, হয়ে উঠে সতেজ আর নবেযৌবনা। হামহাম ঝর্না তখন ফিরে পায় তার আদিরূপ। অপরুপ সৌন্দর্য।
বাকলাই ঝর্ণা
বাকলাই ঝর্ণা সম্ভবত দেশের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা। বান্দরবানের পাহাড়ের গভীরে বাকলাই গ্রামে অবস্থিত এই ঝর্ণাটি প্রায় ৩৮০ ফুট উঁচু। বহু বছর ধরে ট্রেকারদের সুপরিচিত ক্যাম্পিং এই বাকলাই। এর সবচেয়ে বড় কারণ এখানে আছে আর্মি ক্যাম্প, যা অভিযাত্রীদের নিরাপদ। যাই হোক এই বাকলাই -এর পথে পাহাড়ী ছোট নদীও সবার চোখে পরে পথে। কিন্তু এর থেকে নীচে নয়নাভিরাম- বিস্ময়কর এই বাকলাই ঝরনা।
ঝর্ণায় গোসল ও পাহাড় ভ্রমনে কিছু সতর্কতা
- রেইনকোট/ছাতা, ক্যাপ, সানগ্লাস সংঘে রাখুন।
- অবশ্যই গামছা সাথে রাখবেন।
- পাহাড়ে জোঁকের হাত থেকে বাঁচতে সঙ্গে গুল রাখুন। অথবা যদি আগে থেকেই এ বিষয়ে জানতে পারেন তাহলে সতর্ক হতে পায়ে কেরোসিন লাগিয়ে নিন।
- ঝর্ণার উপরের দিকে না উঠাই ভাল।
- মশার কামড়ে সাবধান। মশার হাত থেকে বাঁচতে সঙ্গে অডোমস ক্রিম রাখুন। ফুলহাতা জামা ও পাজামা পরুন।
- পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সাথে রাখুন।
- ঝর্ণায় ও পাহাড় ভ্রমণ করে ফেরার পর যদি জ্বর হয় তবে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
আর হ্যাঁ, একা একা কখনই চলাফেরা করবেননা। ছিনতাই হওয়ার ঝুঁকি থাকে পাহাড়ি এলাকায়।