ইসলামে ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেখায় যে ভ্রমণ কেবল একটি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার উৎস হতে পারে। ইসলামে ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা, সম্প্রীতি এবং আত্ম-সচেতনতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা এবং দোয়া রয়েছে। ভ্রমণের সময় মুসলিমদের জন্য আত্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা তৈরি করে।দোয়া ভ্রমণকারীকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
ইসলামে ভ্রমণের সময় নির্দেশিত অনুশীলনগুলি অনুসরণ করা শুধুমাত্র নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, বরং এটি ভ্রমণকে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রায় পরিণত করে যা ঈমান বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা তৈরি করে।ভ্রমণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি এবং ঐক্য বৃদ্ধি করে, এবং একটি সমৃদ্ধ এবং পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস : ৪৮৭৯) বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত ভ্রমণকালে দোয়া আছে। আল্লাহর সহায়তা কামনা করা হয় ও সফলতার প্রার্থনা করা হয়। যেমন-
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলা— ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওউতা ইল্লা বিল্লাহ। ’ অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম। আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো সামর্থ্য ও শক্তি নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯৫; তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)
সফরের দোয়া—‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হা-জাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তার-দ্বা আল্লাহুম্মা হাউয়িন আলাইনা সাফারনা হা-যা, ওয়াতওই আন্না বুদাহু, আল্লাহুম্মা আনতাস্-সাহিবু ফিস্-সাফরি, ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি ওয়াল মাল। আল্লাহুম্মা ইন্না নাউজুবিকা মিন ওয়া-ছা-ইস সাফারি ওয়া-কাআবাতিল মানজারি, ওয়া সুইল মুনকালাবি ফিল আহলি ওয়াল মাল। ’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের এই সফর সহজ করে দাও। রাস্তার দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সফরের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবারের কাছে তুমি আমাদের স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ! তোমার কাছে সফরের কষ্ট-ক্লান্তি ও ভয়ানক দৃশ্য দেখা থেকে এবং পরিবার, সম্পদ-বিত্ত ও অধীনস্তদের কাছে খারাপ অবস্থায় ফেরত আসা থেকে তোমার কাছে রক্ষা চাই। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৪২)
যানবাহনে আরোহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। যানবাহনে বসার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়া। এরপর বলা ‘সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হা-যা ওয়া-মা-কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন। ’ অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও অশেষ করুণাময়। তিনি পবিত্র ওই সত্তা, যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০২; তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) ভ্রমণ শেষে বাড়িতে ফিরে দোয়া পড়তেন—‘আয়িবুনা ইনশাআল্লাহু তায়িবুনা আবিদুনা লি-রাব্বিনা হামিদুন। অর্থ : আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী নিজ রবের প্রশংসাকারী। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৭)