পাহাড়ে-আহারে, নদীতে নৌকা ভ্রমণ, সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটন স্থান রয়েছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। অপরূপ সৌন্দর্যভরা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক তাই ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিবছর ভিড় জমিয়ে থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন দরবারে। এবার থাকছে বিশ্বের ১০ টি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সমূহ।
১। নর্দার্ন লাইটস
নর্দার্ন লাইটস হল উত্তর মেরুর আকাশে গ্যাসীয় কণার সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন রঙবেরঙের আলোর খেলা। রাতের রংধনু কিংবা আলোর নাচন যা ই বলুন না কেন প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য স্বচক্ষে অবলোকন এক স্বর্গীয় তীব্র শীত, বিরূপ আবহাওয়া, প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে প্রতিবছর উচ্চাকাঙ্ক্ষী পর্যটকরা ঠিকই ভিড় জমাচ্ছে উত্তর মেরুতে। কানাডা, আলাস্কা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া কিবা আইসল্যান্ডে স্থানীয়ভাবে ‘অরোরা’ নামে এই বিরল দৃশ্য দেখা যায়। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোন ক্যামেরায় এর প্রকৃত ছবি ধারণ করা সম্ভব নয়, তাই এটি দেখতে হলে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে উত্তর মেরুর কোন এক দেশে।
২। আইফেল টাওয়ার
প্যারিসকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্য আর সংস্কৃতির তীর্থস্থান। আর প্যারিসের কথা বললে যে স্থাপনাটির কথা সবার আগে ভেসে উঠে তা হল আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৯ সালে বাণিজ্য মেলার স্মারক হিসেবে তৈরি হলেও এখন তা সমগ্র ফ্রান্সের ‘আইকন’-এ পরিণত হয়েছে। টাওয়ারটির উচ্চতা ১০৬৩ ফুট যা ৮১ তলা ভবনের সমান। ৪১ বছর ধরে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা গৌরব ধরে রেখেছিল। এখানে রেস্টুরেন্ট আছে, লিফটের মাধ্যমে আপনি উপরে উঠতে পারবেন। ৯০৬ ফুট উঁচুতে আছে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার।
৩। আফ্রিকান সাফারি
অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগত- আফ্রিকায় একবার সাফারি ট্যুরে গেলে তা আপনার জিবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জিরাফ, গণ্ডার কিংবা গরিলা- আফ্রিকায় যা আছে পৃথিবীর আর কোথাও তা নেই। আদিবাসীদের অকৃত্রিম জীবন দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির অকল্পনীয় সৌন্দর্যের ভিড়ে।
৪। লাস ভেগাস
লাস ভেগাস তার ক্যাসিনো, হোটেল আর রাতভর রঙিন জীবনযাপনের জাদুতে সারা বিশ্বের মানুষকে কাছে টানে। খোদ শহরটির কর্তৃপক্ষ একে ‘বিশ্বের বিনোদন রাজধানী’ বলে ডাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিনোদনে সয়লাব এ শহরকে কেউ কেউ ‘সিন সিটি’ বা ‘পাপের নগরী’ও বলে থাকে। যে যাই বলুক না কেন প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুর জীবনের স্বপ্ন লাস ভেগাসে একটি রাত কাটানো।
৫। চীনের মহাপ্রাচীর
এটি পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায়। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকে উত্তরের মঙ্গল আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য চীনের সম্রাটরা এটি নির্মাণ শুরু করে। ২২০-২০৬ খ্রিস্টপূর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেয়ালগুলো নির্মাণ করা হয়। পূর্বে ডাংডং থকে শুরু করে পশ্চিমে লপ লেক পর্যন্ত ৮৮৫০ কিমি. দিরঘ এ দেয়ালটির বিস্তৃতি।
৬। গিজার গ্রেট পিরামিড
রহস্যময় খুফুর পিরামিড বা গিজার গ্রেট পিরামিড মিশরের সবচেয়ে বড় আর প্রাচীন পিরামিড। প্রাচীনকালের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে এটিই একমাত্র এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। প্রাচীন মিশরের গবেষকদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০ সালে ফারাও খুফুর আমলে এটি নির্মিত হয়। এর উচ্চতা ৪৮১ ফুট, যা প্রায় ৩৮০০ বছর ধরে মনুষ্যনির্মিত সবচে উঁচু স্থাপনা হিসেবে বিদ্যমান ছিল। পিরামিডটি কোন প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়, তা আজো বিজ্ঞানীদের গবেষনার বিষয়।
৭। পিসার হেলানো মিনার
ইতালির পিসার বিখ্যাত হেলানো মিনার মধ্যযুগের ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন। এটির উচ্চতা ৬০ মিটার এবং এটি মাটির সাথে ১০ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। এর নির্মাণকাজ ১১৭৩ সালে শুরু হয়ে তিন ধাপে ১৩৭২ সালে শেষ হয়। এই মিনারে ২৯৭টি সিঁড়ি রয়েছে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আশ্চর্যজনক ও আকর্ষণীয় গন্তব্য।
৮। সিডনি অপেরা হাউস
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে অবস্থিত এ অপেরা হাউজটি দেখতে বছরে প্রায় ৮০ লাখ পর্যটক যান। ১৯৫৯ সালে কাজ শুরু হলেও ১৯৭৩ সালে রানি ২য় এলিজাবেথ এটি উদ্বোধন করেন। পালতোলা জাহাজের মত দেখতে অপেরা হাউজটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনা। ২০০৭ সালে এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
৯। মৃত সাগর
ইসরাইল, পশ্চিম তীর আর জর্ডানের মাঝে অবস্থিত একটি লবনাক্ত হ্রদ যেখানে মানুষ ভেসে থাকতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ৪০০ মিটার নিচে অবস্থিত বলে একে পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু ভুমি বলা হয়। খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ মৃত সাগরের মাটি ভেষজ চিকিৎসা ও রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। মৃত সাগরের চারপাশের মরুভূমিতে অনেক দৃষ্টিনন্দন মরূদ্যান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
১০। আগ্রার তাজমহল
ভারতের আগ্রা নগরীতে যমুনা নদীর দক্ষিণ পাড়ে মার্বেল ও শ্বেতপাথরে নির্মিত সমাধি স্তম্ভ। ১৬৩২ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্মটি নির্মাণ করেন। সেই যুগে প্রায় ৩.২ কোটি রুপি ব্যয়ে এই সুরম্য সমাধিস্থলটি নির্মাণ করতে ২০,০০০ শ্রমিক ১০ বছর ধরে লাগে। নির্মাণের পর থেকেই সারা বিশ্বের কবি, সাহিত্যিক আর পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে আগ্রার তাজমহল।