Home লাইফস্টাইল ইতিহাস পরিক্রমায় বাংলা নববর্ষ

ইতিহাস পরিক্রমায় বাংলা নববর্ষ

সারাদেশ জুড়ে আজ পালিত হচ্ছে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাঙালির মনে সম্ভাবনার আলো জ্বালাতে আবারো একটি নতুন বৎসরের আগমন। প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা নতুন বছর যেন বয়ে আনে শুভ্রতা, মঙ্গলবারতা।নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তীব্র আবেগ কাজ করে সবার মনে? বাংলাদেশি বাঙালিদের কাছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন আত্মপরিচয় সন্ধানের নাম। তবে কি এর ইতিহাস আমরা কি তা জানি? আসু জেনে নেওয়া যাক ইতিহাস পরিক্রমায় বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে-

বাংলা সন গণনা শুরু হয়েছিল ফসলের হিসাবে। মহামতি সম্রাট আকবরের আমলে আরবী ‘সনহ্’, যার অর্থ শতাব্দ বা অব্দ, থেকে বাংলা সন হয়েছে। এই ‘বাংলা সন’ এর নাম প্রথমে ছিল ‘ফসলি সন’। কিন্তু সেই সন গণনা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের ফসল উৎপাদন ও জীবনযাত্রাকে অবলম্বন করে।

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটেরআদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওচিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলাসনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এ গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এ সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি লাভ করে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় আকবরের সময়কাল থেকেই। সে সময় প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবেরও  আয়োজন চলত।

উৎসবটি পরবর্তীতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এ পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এ দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব খোলা। গ্রামেগঞ্জে এ রীতি এখনো বিদ্যমান।

আধুনিক নববর্ষ উদযাপন ঘটে ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকাণ্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।