নাফাখুম জলপ্রপাত বা রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও এটা অনেকের কাছে পরিচিত। মারমা ভাষায় খুম মানে হল জলপ্রপাত। বান্দরবানের প্রাণ সাঙ্গু নদী পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অজস্র ছোট খুম বা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। রেমাক্রিখুম ও নাফাখুম এর মধ্যে অন্যতম। বর্ষার সময় নাফাখুম জলপ্রপাতের আকার বড় হয়, আর সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে নাফাখুমের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়। পানি প্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত যাকে বাংলাদেশের নায়াগ্রা’ও বলা হয়।
বান্দরবানে অসাধারণ রোমাঞ্চকর একটি অভিযান চালাতে পারেন নাফাখুম। সৌন্দর্যে নাফাখুম জলপ্রপাত হচ্ছে একটি পাহাড়ি জলপ্রপাত। রেমাক্রী নদীতে এক ধরনের মাছ পাওয়া যায় যার নাম নাফা মাছ। এই মাছ সবসময় স্রোতের ঠিক বিপরীত দিকে চলে। বিপরীত দিকে চলতে চলতে মাছগুলো যখন লাফিয়ে ঝর্না পার হতে যায় ঠিক তখনই উপজাতীয়রা লাফিয়ে ওঠা মাছগুলোকে জাল বা কাপড় দিয়ে ধরে ফেলে। তাই এই প্রপাতটির নাম দেওয়া হয়েছে নাফাখুম। তিনটি ধাপে নেমে আসা এই জলপ্রপাতটি প্রায় ৩০ ফুট নিচে পতিত হয়ে সূর্যের আলোর সাথে তৈরি করে বর্ণিল রংধনু।
বর্ষাকালে ঝর্না দিয়ে তীব্র গতীতে পানি নিচের দিকে পতিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে তীব্রতা কমে যায় ও ঝরনার আকার ছোট হয়ে আসে। তবে যারা নাফাখুম ঝর্নার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চান তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করলে তা দেখতে পারবেন। এই সময় উপর থেকে আছড়ে পড়া পানির প্রচন্ড আঘাতে ঝর্নার চারপাশে অনেকটা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার সেই সাথে উপর থেকে নিচে পানি পতিত হওয়ার আওয়াজ তো রয়েছেই। বাতাসের সাথে উড়ে যাওয়া পানির বিন্দু পর্যটকদের দেহ মন সব আনন্দে ভিজিয়ে দেয়। যা কিনা মুহুর্তের মধ্যে যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম। নাফাখুম জলপ্রপাত সম্পর্কে আরও জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে।
যেভাবে যাওয়া যায়
নাফাখুম জলপ্রপাত যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার থেকে বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা। আবার চট্টগ্রাম থেকেও বান্দরবান যেতে পারেন। বান্দরবান হতে পাবলিক বাস অথবা জীপ অথবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি যেতে হয়। তবে পাবলিক বাসের চাইতে জীপ অথবা চান্দের গাড়িতে করে গেলে পথের সুন্দর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে বেশি।
সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। থানচি পৌঁছানোর পর সেখান থেকে যেতে হবে ক্রেমাক্রী বাজার। রেমাক্রী বাজার হতে নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন সাঙ্গু নদীর নৌকা। এখানে আপ-ডাউন ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাওয়া যায়। এই নৌকা ভাড়া করার জন্য পর্যটকদের থানচি ঘাটে অবস্থিত নৌকাচালক সমিতির সাথে কথা বলতে হয়। রেমাক্রী থেকে নাফাখুম ঝর্নায় যাওয়ার কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। অবশিষ্ট পথটুকু পর্যটকদের পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।
থাকা ও খাওয়াঃ
থাকার জন্য যেতে হবে তিন্দু, রেমাক্রি। মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়ীতে অনায়াসে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে আপনাদের। মারমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই খুব অল্প টাকায় এমন থাকা-খাওয়ার সুবিধে রয়েছে। তিনবেলা খাওয়ার খরচ পরবে জনপ্রতি ২০০ টাকা, আর থাকা ফ্রি। তবে যে বাড়ীতে ফ্রি থাকবেন, খেতে হবে তাঁর দাওয়ায বসেই।