ধূমপান অর্থ বিষপান। নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির কাছে এই নেশাকে বিদায় জানানো এত সহজ নয়, অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন অনেকেই। ধূমপান ছাড়ার পরও অনেকেই আবার মাঝে মাঝে সিগারেট ধরান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের প্রবণতা আপনার দৃঢ় সংকল্পকে দুর্বল করে ফেলে।
ধূমপান ছাড়ার পর ধূমপায়ী আবার মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করে বসেন। নিচে দেওয়া হলো এমন কিছু উদাহরণ –
ধূমপান ছাড়ার পুরষ্কার হিসেবে: এক সপ্তাহ ধূমপান বিহীন কাটিয়েছেন! এই খুশিতে একটি সিগারেট তো খাওয়াই যায়, নাকি? অনেক সময় ধূমপান ছাড়ার পুরষ্কার হিসেবে ধূমপান করে বসেন অনেকে।
অন্যের সিগারেট থেকে সুখটান: নিজে সিগারেট কিনে খাচ্ছেন না, তবে বন্ধুর সিগারেট থেকে একটু সুখটান দিচ্ছেন। এ আর এমন কী!
বিশেষ দিনে ধূমপান: সিগারেট হয়ত ছেড়েছেন অনেক আগেই, তবে কালেভদ্রে আড্ডা জমে উঠলে কিংবা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে একটু ধূমপান করছেনই। এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে আপনার ক্ষতি।
অভ্যাসবশত ধূমপান: সারাক্ষণ ধূমপান করছেন না তবে দৈনন্দিন জীবনে টুকটাক কাজের ফাঁকে অভ্যাসবশত করে ফেলছেন। যেমন বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সময়, কিংবা একটু চা খাওয়ার সময়।
মানসিক চাপ বাড়লে: হয়তো অফিসে দিনটি খারাপ কেটেছে, পরিবারের কারও সঙ্গে কিংবা কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, আপন কেউ মারা গেছে—ব্যস নিজেকে সামলানোর ভার তুলে দিলেন সিগারেটের হাতে।
মুক্তির উপায়
এই টুকটাক অভ্যাসগুলোর মাধ্যমেই কিন্ত আপনাকে পেছন দিকে টানতে থাকবে নিকোটিনের আগ্রাসী নেশা। তবে কিছু উপায় জানলে আপনি খুব সহজেই পরাজিত করতে পারেন ধূমপানের নেশাকে এবং বীরদর্পে এগিয়ে যেতে পারবেন সুস্থ জীবনের দিকে –
# যদি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ধূমপানের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে, তাহলে চেষ্টা করুন কিছু দিনের জন্য এসব থেকেদূরে থাকতে। কমপক্ষে যতদিন পর্যন্ত আপনার শরীর-মন নিকোটিনের আগ্রাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত না হয়। সেসময় অন্য কিছু করতে পারেন যেমন- সিনেমা দেখা, বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি।
# বন্ধু এবং আত্মীয়দের সঙ্গে এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলুন। যারা ধূমপান করেন, তাদের অনুরোধ করুন যেন আপনার সামনে ধূমপান না করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই আপনাকে সাহায্য করবে।
# বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ধূমপান করার ইচ্ছা জাগতে পারে হঠাৎ করেই, এক্ষেত্রে সবসময় প্রস্তুত থাকুন এই লোভকে জয় করার জন্য। মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন অন্যদিকে—বন্ধুকে ফোন করে কথা বলুন, ফলমূল খান, চিনিমুক্ত চিউইং গাম চাবান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে আসুন কিংবা একটু ব্যায়াম করেও নিতে পারেন ।
# ঠিক কী কী বিষয় আপনাকে ধূমপান করতে প্ররোচিত করে তার একটি তালিকা বানান নিজে নিজে, এবার কিভাবে সেগুলো থেকে মন ফেরানো যায় তা নিয়ে ভাবুন।
মনে রাখবেন
ধূমপান ছাড়ার পথটা অনেক কঠিন, মাঝে মাঝে পা পিছলে গেলে ভাববেন না হেরে গেছেন। কখনও হতাশ হয়ে আবার সিগারেট হাতে তোলার আগে একবার ভেবে দেখবেন নিজের প্রিয়জনদের কথা। ভুলবেন না, এই নেশা আপনাকে সময়ের আগেই প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে।