গরমের এক অন্যতম ফল হল তরমুজ। আর এই সময় প্রাণ জুড়াতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তবে শুধু তৃষ্ণা নিবারণেই নয়, ত্বকের যত্নেও তরমুজ বেশ উপকারী। তরমুজ আসলে এমন একটি ফল, যার প্রতিটি অংশ আপনি ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়। আসুন জেনে নিই তরমুজ দিয়ে রূপচর্চা প্রসঙ্গে-
তরমুজে ৯০ শতাংশের বেশি পানি থাকে, যা মূলত শরীর ও ত্বকের পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) কমিয়ে আনে। এ ছাড়া তরমুজের অ্যামিনো অ্যাসিড ত্বকের কোলাজেন নামক উপাদান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে এতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি এবং সি। এই উপাদানগুলো ত্বকের শুষ্কতার পাশাপাশি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
* তরমুজে যেহেতু ভিটামিন এ রয়েছে, তাই এটি আপনার চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে।
* তরমুজের ভিটামিন এ ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে।
* তরমুজের অ্যামিনো অ্যাসিড মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। ফলে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
*ত্বকের যেকোনো সমস্যায় তরমুজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গরমে ব্ল্যাকহেডস, র্যাশ, পোড়া ভাব কিংবা ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার সমাধানে তরমুজের মাস্ক, তরমুজের রসের আইস কিউব বেশ উপকারী।
ময়েশ্চারাইজার এবং স্ক্রাব হিসেবে
ত্বকের পোড়া ভাব কাটিয়ে উজ্জ্বল ও ময়েশ্চারাইজ রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তরমুজে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটা স্ক্রাব হিসেবে দারুণ।
এক টুকরো তরমুজ কেটে নিয়ে ত্বকে আলতোভাবে ঘষে নিতে পারেন। তারপর ঠান্ডা পানি কিংবা আইস কিউব দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। চাইলে তরমুজের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে স্ক্রাবিং করতে পারেন। ১০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তরমুজের বীজ শুকিয়ে গুঁড়া করেও স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর সঙ্গে শুধু যেকোনো ক্লিনজার মিশিয়ে নিলেই হলো। এটি আপনার ত্বকের কালো দাগও দূর করবে।
ক্লিনজার হিসেবে
রোদ যতই তীব্র হোক, কাজের প্রয়োজনে বাইরে তো যেতেই হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ধুলাবালু। ঘরে ফিরেই দেখা যায় ত্বকে র্যাশ, ব্রণের সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বকে র্যাশ আর ব্রণের সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রেও তরমুজ ব্যবহার করতে পারেন। তরমুজ এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এমনকি যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁরাও তরমুজ, পাকা কলা, দুধের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন প্যাকটি ব্যবহার করুন।
মাস্ক হিসেবে
তরমুজের সঙ্গে বেসন, দুই চিমটি হলুদ, টক দই এবং পরিমিত লেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করতে পারেন। শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এই মাস্ক টোনার হিসেবে উপকারী। ফলে ত্বকে সহজেই বলিরেখা পড়বে না। এই মাস্ক ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে রাখতে পারেন। এর বেশি না রাখাই ভালো। অথবা শুধু ডিমের কুসুম দিয়েও তরমুজের মাস্ক তৈরি করতে পারেন। এটি রোদে পোড়া দাগ কমিয়ে আনে।
তরমুজের রসের সঙ্গে সয়াবিন গুঁড়া, আধা চামচ মধু এবং ডিমের সাদা অংশ যদি পেস্ট করে নেওয়া যায়, তবে সেটা খুব ভালো মাস্ক হিসেবে কাজ করে। এটি যেকোনো ত্বকের জন্যই উপকারী।
ব্রণের সমস্যায় তরমুজের বীজ
পরিষ্কার করে নেওয়া তরমুজের বীজগুলো পানিতে সেদ্ধ করে নিন। বীজগুলো নরম হয়ে গেলে পেস্ট করে ব্রণের ওপর মালিশ করুন। তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে তার ওপর ডিমের সাদা অংশ ব্রাশ দিয়ে আলতো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী।
তরমুজের খোসার সবুজ অংশ পাতলা করে কেটে নিয়ে অল্প পানিতে সেদ্ধ করে নিন। পানি ঘন হয়ে গেলে সেটি ঠান্ডা করে আপনি টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।