রহমতের মাসে প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। কিন্তু এ ফরজ কাজটি করতে গিয়েই বেশিরভাগ সময়ই বেশ অসুবিধায় পড়ে যান ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা। কারণ এ সময় পরিবর্তন করতে হয় তাদের খাদ্যাভাস ও ওষুধের সময়সূচি। আর পরিবর্তনের কারণে তাদের শরীরের ক্যালরি এবং ওষুধের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা দেখা দেয়।
এতে করে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে আবার কমে যেতে পারে। আর ঠিক এই কারণেই রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের আগে থেকেই পূর্ব-প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ দরকার।
রোজা রাখলে ডায়াবেটিস রোগীদের কী কী সমস্যা হতে পারে?
রোজা রাখার কারণে কমপক্ষে চার ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে একজন ডায়াবেটিস রোগীর।
১. রক্তে হঠাৎ শর্করাস্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া,
২. রক্তে শর্করা আধিক্য বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া,
৩. কিটোনিউরিয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে কিটোন নির্গত হওয়া এবং
৪. পানিশূন্যতা।
এই ঝুঁকিগুলো এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
- রোজা রেখে মাঝেমধ্যে বিশেষ করে প্রথম কয়েক দিন দিনের বেলা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের শর্করা পরিমাপ করুন। বিশ্বের বড় বড় আলেমরা ফতোয়া দিয়েছেন যে গ্লুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষায় রোজা ভাঙে না। ইফতারের এক ঘণ্টা আগে ও দুই ঘণ্টা পর এবং মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা রক্তে শর্করা দেখুন। দিনের বেলা কখনো রক্তে শর্করা ৪ মিলিমোলের কম বা ১৬.৭ মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলে রোজা ভাঙতে হবে।
- সন্ধ্যার পর একসঙ্গে অনেক খাবার ও সহজ শর্করা বা চিনি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না। এতে হঠাৎ করে শর্করা বেড়ে যেতে পারে।
- পানিশূন্যতা এড়াতে সন্ধ্যার পর বেশি করে পানি, ডাবের পানি, জলীয় অংশ বেশি এমন খাবার গ্রহণ করুন।
- রমজানে আপনার ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি সম্পর্কে রোজার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
চলুন তবে এবার জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগীরা রমজানে কি কি খাবার গ্রহন করবেন
সেহরিতে যা খাবেন
১) ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, শাকসবজি, ফল
অথবা
২) আটার রুটি-পাউরুটি, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, শাকসবজি, ফল
উপরের যেকোনো একটি খাবেন। খাবারের পরিমাণ অন্য সময়ের দুপুরের খাবারের মতো।
ইফতারে যা খাবেন
১) ইফতারে যেকোনো একটি পানীয় বা শরবত রাখা জরুরি। আনারস, তরমুজ, জাম্বুরা, জাম, কমলা অথবা কোনও রসালো ফলের রস অর্ধেক গ্লাস, সাথে অর্ধেক গ্লাস পানি ও এক চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। মিষ্টি স্বাদের জন্য স্যাকারিন বা এসপারচেম মেশানো যায়। এছাড়া পানীয়ের তালিকায় আরও থাকতে পারে চিনিবিহীন দই দিয়ে বানানো লাচ্ছি, মিল্ক শেক অথবা কচি ডাবের পানি।
২) ইফতারে ফল থাকতেই হবে। খেজুর ২-৩টা, মিষ্টি ফল যেকোনো একটি। মিষ্টি ফলের মধ্যে থাকতে পারে একটা কলা, আপেল, কমলা, মোসাম্বি অথবা ছয়টা লিচু, আতা ফল একটা, কাঁঠাল তিন কোয়া, পাকা পেঁপে ৬০ গ্রাম, নারকেল ২-৪টা চামচ, বেদানা অর্ধেক, পাকা বেল অর্ধেকটা, আনারস ৬০ গ্রাম, আঙ্গুর তিনটা, তাল এক কাপ।
৩) শসা, খিড়া, গাজর, কাঁচা পেয়ারা- ইচ্ছামতো
৪) ইফতারে ভারি খাবারের মধ্যে থাকতে পারে
ক) বুট-ভুনা আধা থেকে এক কাপ, মুড়ি- দুই-তিন কাপ, পিঁয়াজু দুই/তিনটা, বেগুনি-দুই/তিনটা, হালিম
অথবা
খ) ভেজা চিড়া- দুই কাপ, কলা- ১টা, দই- এক কাপ
অথবা
গ) পরোটা/পুরি, মাংস, ডাল, হালিম
অথবা
ঘ) ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজি
উপরের যেকোনো একটি খাওয়া যেতে পারে। খাবারের পরিমাণ হতে হবে অন্য সময়ের রাতের খাবারের মতো।
রাতে যা খাবেন
১) ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, শাকসবজি
অথবা
২) আটার রুটি, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, শাকসবজি
উপরের যেকোনো একটি খেতে হবে। রাতের খাবারের পরিমাণ হবে অন্যান্য দিনের সকালের নাস্তার মতো।
খাবারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা
১) ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহরি- এই তিন বেলাই খেতে হবে।
২) সেহরির শেষ সময়ের অল্পক্ষণ আগে খেতে হবে।
৩) ডায়াবেটিস আক্রান্তদের অল্প পরিমাণ খাবার খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয়। তাই পরিপূর্ণ খাবার খেতে হবে।
রমজানে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ শরীর সুস্থ না থাকলে এসব রোগীর জন্য রোজা রাখা অনেক সময় নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন খাবারের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের।