প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকার এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত।
দীর্ঘ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে অনেক কষ্টে গহীন অরন্যে এই জলপ্রপাতকে দেখতে প্রতিদিন আগমন ঘটছে পর্যটকদের ঢল। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট এটি হামহাম ঝর্না বা হাম্মাম ঝর্না নামে পরিচিত।
বড় বড় পাথরের গায়ে আয়নার মত স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেঁয়ে আছড়ে পড়ছে| গুড়ি গুড়ি জলকনা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। বুনোপাহাড়ের ১৫০ ফুট উপর হতে গড়িয়ে পড়ছে স্রোতধারা, কলকল শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর কেটে সামনের দিকে।
চারিদিকে গাছ গাছালি আর নাম না জানা হাজারো প্রজাতীর লতা পাতা ও গুল্মে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পাহাড়ী শরীর। সব মিলিয়ে নয়নাভিরাম এক অপরূপ দৃশ্য।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগের অভাবে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। এছাড়া প্রচার প্রচারনার অভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম এই জলপ্রপাতটি ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে।
পথের দু পাশে বুনো গাছের সজ্জা। জারুল, চিকরাশি ও কদম গাছের ফাঁকে ফাঁকে হাজারো প্রজাপতি মেলে দেয় তাদের রঙিন ডানা। ডুমুর গাছের শাখায় চলে চশমা বানরের আনাগোনা| আরও রয়েছে ডলু, মুলি, মিটিংগা, কালি ইত্যাদি নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।
পাথুরে পথে হেঁটে যেতে যেতে সুমধুর পাখির কলরব মনকে ভাললাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেবে। কানে ভেসে আসবে বিপন্ন বন মানুষের ডাক। দু’চোখের সামনে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
জঙ্গলে রয়েছে উল্লুক, বানর আর হাজারো পাখি| সব মিলে মিশে তৈরি হয়েছে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। উপরে আকাশ, চারিদিকে বন, পায়ের নিচে ঝিরির স্বচ্ছ জল আর সম্মুখে অপরূপ ঝর্না।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সড়ক রেল ও আকাশ পথে প্রথমে সিলেট গিয়ে তারপর সেখান থেকে সড়ক বা রেল পথে মৌলভীবাজার।
মৌলভীবাজার এর কমলগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩৮ কিঃমি পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকায় এ জলপ্রপাতের অবস্থান। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে স্থানীয় মিনিবাস, জীপ, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিয়ে কমলগঞ্জের-কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫কিঃ পাকা রাস্তা, বাকী ১৫/২০ কিঃ মিঃ মাটির রাস্তায় পায়ে হেঁটে চাম্পা রায় চা বাগানের ভেতর দিয়ে কলাবন বস্তি হয়ে মোকামটিলায় গেলে দেখা পাওয়া যায় ১৫০ফুট উচ্চতা ও ৮০ ফুট প্রস্তের এই জলপ্রপাত।