পান্তা তো সবাই চিনি। শুধু মাত্র বাঙালীয়ানার একটা অংশ হিসেবে পহেলা বৈশাখে পান্তা খেয়ে থাকি। কিন্তু এর গুনাগুণ যদি জানতাম তাহলে হয়তো প্রত্যেকদিনই খেতাম। আজ এই লেখার মাধ্যমে পান্তার গুনাগুণ জানানোর চেষ্টা করবো। কথায় আছে, “পান্তা ভাতের জল, তিন পুরুষের বল”। হ্যা সত্যি তাই পান্তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কারণ বলিষ্ঠ শরীর এবং নিজেকে সুষ্ঠু রাখতে পান্তা ম্যাজিকের মত কাজ করে থাকে।
১২ ঘণ্টা ভাত ভিজিয়ে রাখলে ১০০ গ্রাম পান্তায় ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন তৈরি হয়। আর সেই সম পরিমাণ গরম ভাতে আয়রন থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম।
এছাড়া আমেরিকার নিউট্রিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা জানাচ্ছে ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাকস্থলীর প্যানক্রিয়াটিক অ্যামাইজেল সহ আরও কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। দেহের বহু উপকারী ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতে তৈরি হয়।
পান্তা ভাতের ক্যালরি মূল্য নির্ভর করে কি ধরনের চাল দিয়ে রান্না করা হয়েছে তার উপর। চাল ভেদে ১ কাপ ভাত থেকে ২০০- ২৪২ ক্যালরি পাওয়া যায়। অনেকে পান্তা ভাতের সাথে ঘি খেয়ে থাকেন। ১ টেবিল চামচ ঘি থেকে পাওয়া যায় ১১২ ক্যালরি। দই পান্তা ও জিরা পান্তার ক্যালরি মূল্য আরও বেশি। কারণ এগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় টক দই ও তেল।
পান্তা ভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়ামের পরিমাণ রান্না করা ভাতের তুলনায় বেশি থাকে। অন্যদিকে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া ভিটামিন -বি ২, ভিটামিন -বি ১২ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে।
পান্তা ভাত দেহে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে দেহকে পানিশূন্যটা থেকে রক্ষা করে। তীব্র গরমে সান-স্ট্রোক বা হিট-স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। পান্তা গ্যাস্টিক রোগীর জন্যও উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বয়স্কদের জন্যও পান্তা মোটেই ভালো নয়।
ভাতের চেয়ে পান্তায় পুষ্টি বেশি। ভাতের তুলনায় পান্তা সহজে হজম হয়। ভাতের চেয়ে পান্তায় সোডিয়াম কম থাকায় রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, তবে এর সাথে লবণ বেশি নেওয়া যাবে না। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া বা ইস্ট শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া যে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে এর ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায়। তখন পচনকারী ও অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।