আত্মহত্যার সংখ্যাগত দিক থেকে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা যায়, আত্মহত্যা প্রবণতা কিন্তু নারীদের চেয়ে পুরুষদের মাঝেই বেশি।
পুরুষেরা অবশ্য নিজেকে শেষ করে দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন নারীদের চেয়ে অনেক বেশি গোপন পদ্ধতি। তবে যদি নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি বিবেচনা করা হয়, তবে সে ক্ষেত্রেওআত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষদেরই বেশি।
গবেষণায় আরও বলা হয়, বিষন্নতার মতো বিভিন্ন কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরা গোপন পদ্ধতিই বেছে নিতে চান।
আলাবামার অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গোপিকৃষ্ণা দেশপান্ডের নেতৃত্বে এক দল গবেষক একটি গবেষণার মাধ্যমে জানান, কোনো পদ্ধতিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে যে কেউ উৎসাহী হয়ে ওঠে যাকে বলে ‘অ্যাকুয়ারড ক্যাপাবিলিটি অব ডিজায়ার (এসিএস)’। একে মৃত্যু নিয়ে ভয় না থাকা, যন্ত্রণা সহ্যের ক্ষমতা, আবেগের প্রতি নিস্পৃহ থাকা এবং চেতনার দর্শনের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করেছেন গবেষকরা।
গোপন কোনো পদ্ধতিতে নিজের মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে আবেগের একটা স্তর রয়েছে যেখানে পৌঁছে যায় আত্মহননকারী। তার সঙ্গে যোগ হয় জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা যন্ত্রণা।
আর পুরুষদের মধ্যে এসিএস এর মাত্রা থাকে অনেক বেশি। যার ফলে তাদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা নারীদের চেয়েও বেশি। এ গবেষণায় মানুষের মধ্যে এসিএস নেটওয়ার্ক দেখতে মেটা-অ্যানালাইসিস করেন বিশেষজ্ঞরা এবং এর সঙ্গে নিউরাল কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয় যা কিনা যুক্ত ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সঙ্গে।
মস্তিষ্কের যে অংশ এসিএস এবং বিষণ্নতার কারণে কাজ করে নারী-পুরুষভেদে পার্থক্য রয়েছে সেখানে। এক পরীক্ষায় দেখা যায়, মস্তিষ্কের এই অংশে নারী অপেক্ষা পুরুষদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি বিচিত্র এবং তীব্র।
নারীদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতায় প্রভাব ফেলে তার আবেগময় অবস্থা। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটায় মোটর অংশ। তাই এর তীব্রতা বেশি থাকে।
আত্মহত্যার ইচ্ছা তাই পুরুষের ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে অনেক বেশি আগ্রাসী। এমনকি মারাত্মক সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে তারা। আর এখানে তীব্রভাবে কাজ করে আবেগ। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো কাজ করে অনেক মসৃণভাবে।
যদি আত্মহত্যার সঙ্গে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশগুলো জড়িত থাকে, তবে এদের প্রভাববিস্তার করে সমস্যা থেকে মিলতে পারে মুক্তি। অর্থাৎ এমন প্রবণতা থেকে বের করে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে কার্যকর থেরাপির। ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন, ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন এবং আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতেও চিকিৎসা সম্ভব।